জাতীয়

মহান বিজয় দিবস আজ :

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহান বিজয় দিবস আজ

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বিকেলে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন তাঁর মন্ত্রমুগ্ধকর ভাষণে। সেই ময়দানেই একই বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেছিলেন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রায় ৯১ হাজার ৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণকরেছিল বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বাহিনীর কাছে। তখন উৎসবে মেতে উঠেছিল বাঙালি জাতি।বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস আজ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে রাঙিয়ে রাতের অন্ধকার ভেদ করে বাংলার দামাল ছেলেরা কেড়ে এনেছিল ফুটন্ত সকাল। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন এটি। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। জাতির আনন্দদিন এই জাতীয় দিবস। ৪৬ বছরেও সেই আনন্দের এতটুকু কমতি নেই। কারণ দিনটি হলো বাংলাদেশের এগিয়ে চলার অনন্ত উৎস।

অন্ধকার দুরে ঠেলে আলোর দিকে এগিয়ে চলার প্রেরণা।প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিদেশি কূটনীতিক, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। সকাল ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন রাষ্ট্রপতি। প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন অনুষ্ঠানে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাঙালির ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটেছিল ১৯৭১ সালের এই দিনে। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। কিন্তু পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরশাসক বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এড়াতে নানা কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিল। শেষে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর ট্যাংকসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। এর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছিল। ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মুখ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধারা ছিনিয়ে এনেছিলেন মুক্তির লাল সূর্য।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ আজ সূর্যোদয়ের  ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবে। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবে দলটি। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীর সব থানা আওয়ামী লীগের নেতা ও জাতীয় সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকা থেকে বিজয় শোভাযাত্রা নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হবেন। বিকেল ৩টায়  শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তাঁরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় শোভাযাত্রা শুরু হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারা দেশে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযথ মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদ্যাপনের জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্মসুচি পালন করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করার প্রস্তুতি নিয়েছে।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। স্মারক ডাকটিকিট বের করবে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ এ ধরনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উন্নত খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সব শিশু পার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটি উন্মুক্ত রাখা হবে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বাণী : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলাদা বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, ‘আমি মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাব আসুন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরো বেশি অবদান রাখি, দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিই সমৃদ্ধ আগামীর পথে। ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে দেশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বাণীতে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশ ও জনগণের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

খালেদা জিয়া তাঁর বাণীতে বলেন, ‘শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়েই ১৯৭১ সালে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে আমাদের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার খর্ব হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই এ দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে। ’

Comment here