রোহিঙ্গা সমাচার

মিয়ানমারের দূতকে আনুষ্ঠানিক পত্র হস্তান্তর : সীমান্তে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব বাংলাদেশের

 

তোফায়েল আহমদ কক্সবাজার, জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ

সীমান্তে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব বাংলাদেশের

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় গতকাল সকালে ২২৪ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। ছবি : কালের কণ্ঠ

 

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের এলাকাগুলোতে সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে গুলি করছে। বাংলাদেশের ঘুনধুম সীমান্ত থেকেও উর্দি পরা ওই সদস্যদের দেখা যায়। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই তারা দফায় দফায় গুলি করছে। ওপার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। বিজিপি এলোপাতাড়ি গুলি করে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। আর লাল পোশাক পরা লাল বাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ওপারে মুহুর্মুহু গুলির কারণে উৎকণ্ঠা বেড়েছে সীমান্তের এপারেও।

তবে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি রাখাইনে সাম্প্রতিক সহিংসতার সময় ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার দায় চাপিয়েছেন রোহিঙ্গাদের ওপরই। পাশাপাশি শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে। গতকাল স্টেট কাউন্সিলর’স অফিসের পক্ষ থেকে ফেসবুকে প্রকাশিত বিবৃতিতে তিনি এসব অভিযোগ তোলেন।

এতে বলা হয়, “‘সন্ত্রাসীরা’ শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছে। তারাই সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর গ্রামগুলোতে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ” স্টেট কাউন্সিলর’স অফিস সরাসরি দেখভাল করেন সু চি। বার্তা সংস্থা এএফপির খবর অনুযায়ী এই দপ্তরের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগযোগ নেই, এমন সাধারণ মানুষের কোনো ভয় নেই। ’ নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে পড়লে লাঠি, ছুরি বা তরবারি উঁচু না করতে বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতির সঙ্গে ‘সন্দেহভাজন জঙ্গিদের’ গুলিতে নিহত সাধারণ মানুষের বীভৎস ছবিও প্রকাশ কর হয়।এ অবস্থায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর করতে সীমান্ত এলাকায় যৌথ অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম গতকাল ঢাকায় মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং মিন্তকে ডেকে এসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব হস্তান্তর করেন। গত শনিবারও মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছিল বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সহিংসতায় প্রাণহানি এবং ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শও দিয়েছিল।

এদিকে সীমান্ত গলে রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে জন্য সীমান্তে কড়া পাহারায় রয়েছে বিজিবিসহ অন্য সংস্থার সদস্যরা। তবে পাহারা সত্ত্বেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার কমপক্ষে ২০টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। এই তিন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ করে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের হারাইঙ্গাঘোনা ও উলুবনিয়া পয়েন্ট দিয়ে প্রতি রাতেই অনুপ্রবেশ করছে শত শত রোহিঙ্গা। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে রবিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৬১৬ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি।

মিয়ানমারে গুলি-বোমায় আহত হয়ে এপারে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরো ১১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে গত চার দিনে সেখানে আহত ১৭ রোহিঙ্গাকে ভর্তি করা হলো। তাদের মধ্যে মুছা নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সীমান্তে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব বাংলাদেশের : কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানান, মিয়ানমারের নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর করতে সীমান্ত এলাকায় যৌথ অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম গতকাল ঢাকায় মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অং মিন্তকে ডেকে এসংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব হস্তান্তর করেন।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আনুষ্ঠানিক পত্রে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও অরাষ্ট্রীয় অপশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার গত শুক্রবারের হামলার জন্য ‘বেঙ্গলি’ সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছে। মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বোঝাতে ‘বেঙ্গলি’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। কারণ তাদের দাবি, ব্রিটিশ আমলে ‘বেঙ্গল’ থেকে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে গেছে।

তবে বাংলাদেশ এ বিষয়ে বরাবরই আপত্তি জানিয়ে আসছে। ২০১৩ সালে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও ‘বেঙ্গলি’ শব্দটি ব্যবহার করবে না বলে মিয়ানমার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এর পরও সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার আবারও রোহিঙ্গাদের ‘বেঙ্গলি’ বলে অভিহিত করেছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গতকালও মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে, মিয়ানমার যেন এ শব্দটি আর ব্যবহার না করে। এ বিষয়টি এবং যৌথ অভিযান চালানোর প্রস্তাবের কথা মিয়ানমার সরকারকে অবহিত করতে ঢাকা সে দেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে সেনা, বিজিপি ও লাল বাহিনী, মুহুর্মুহু গুলিতে উৎকণ্ঠা এপারেও : গতকাল সকালে সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের এলাকাগুলোতে মুহুর্মুহু গুলি শুরু করে সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা। এতে এপারে বাংলাদেশেও সীমান্ত এলাকায় উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সীমান্তের একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাত্ক্ষণিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। সীমান্তের তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অ্যাসেম্বলির সময় আকস্মিক গোলাগুলি শুরু হয়। গুলির শব্দে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তাত্ক্ষণিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। ’

সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনা সদস্যদের পাশাপাশি লাল পোশাক পরা আরেকটি বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। রাখাইন রাজ্যের ওপার থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এসব বাহিনীর সদস্যরা পৃথকভাবে তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেনা সদস্যরা কিলিং অপারেশনের দায়িত্ব নিয়ে অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে। বিজিপি সদস্যদের কাজ হচ্ছে সীমান্ত এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়া। লাল পোশাকে সজ্জিত ‘লাল বাহিনী’র কাজ হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ঘরদুয়ার জ্বালিয়ে দেওয়া।

গতকাল ঘুনধুম সীমান্ত থেকে মিয়ানমারে বিভিন্ন বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘুনধুম সীমান্তেরর জলপাইতলি পয়েন্টে গত শনিবার মিয়ানমার বাহিনীর গুলি এবং অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা নারী ও শিশু এপারে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই থেকে তাদের কর্ডন করে রেখেছিলেন বিজিবি সদস্যরা। বিজিবি নিজেদের উদ্যোগে তাদের জন্য ত্রিপলের ব্যবস্থা করে। স্থানীয় লোকজন তাদের খাবার দেয়। গতকালও স্থানীয় ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার কামাল উদ্দিন নিজের উদ্যোগে এক হাজার ১০০ প্যাকেট খিচুড়ি বিতরণ করেন রোহিঙ্গাদের মধ্যে।

বিজিবি সদস্যরা গতকাল সকালে এসব রোহিঙ্গার সম্মতিতে তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। জলপাইতলি থেকে সীমান্তের ওপারে ঢেকিবুনিয়ায় মিয়ানমারের কাঁটাতারসংলগ্ন নো ম্যানস ল্যান্ডে বিজিবি সদস্যরা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে দেন। তবে রোহিঙ্গারা এপার থেকে নো ম্যানস ল্যান্ডে যাওয়ামাত্রই মিয়ানমার বাহিনী ব্যাপকভাবে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এমনকি নো ম্যানস থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়াতে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সদস্যরা তাদের দিকে অস্ত্র তাক করে রাখে। জানা গেছে, বিজিবি ফিরিয়ে দিলেও পরে আবার অনেক রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে এপারে চলে আসে।

এপারের সীমান্ত এলাকা থেকে দেখা গেছে, মোহাম্মদ ইউনুস নামে ওপারের স্থানীয় একজন সাবেক চেয়ারম্যানসহ বহু রোহিঙ্গার ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে লাল বাহিনীর সদস্যরা।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ঈশা খান মানিক কালের কণ্ঠকে জানান, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনাও বাড়ে। তিনি বলেন, ‘রবিবার রাতে আমার বাড়িসংলগ্ন নাফ নদের হারাইঙ্গাঘোনা ঘাট দিয়ে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। ওই সময় বিজিবির পাহারা না থাকার সুযোগে রোহিঙ্গারা পার হচ্ছে। রোহিঙ্গারা নাফ নদ দিয়ে উঠে টেকনাফ মহাসড়কে সিএনজি, ইজিবাইকসহ নানা যানবাহনে করে কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। ’

হোয়াইক্যং ইউপির মেম্বার জালাল উদ্দিন জানান, নাফ নদের উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে প্রতিরাতেই রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। রবিবার রাতেও অন্তত হাজার দুয়েক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। একইভাবে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আনজুমানপাড়া ও রহমতরবিল এলাকা দিয়েও আসছে রোহিঙ্গার দল।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আমতলী ও জলপাইতলী দিয়েও রাতের বেলায় ঢুকছে রোহিঙ্গারা। গত কয়েক দিনে কী পরিমাণ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে, তার কোনো হিসাব না থাকলেও স্থানীয়দের ধারণা এ সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ-ছয় হাজার।

সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ চেষ্টাকালে ৬১৬ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। রবিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত হোয়াইক্যং ও উনছিপ্রাং পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সীমান্তে দিন-রাত টহল জোরদার রয়েছে, ফাঁকফোকর দিয়ে যাতে কোনো বিদেশি বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া এ কাজে বিজিবির পাশাপাশি কোস্ট গার্ড এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছে।

রবিবার রাত সোয়া ১০টার সময় হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সামনে চেকপোস্ট বসিয়ে সাত রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাহির উদ্দিন খান।

আহত আরো ১১ রোহিঙ্গাকে চমেকে ভর্তি : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক, জানান, রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত আরো ১১ জন রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার রাত ১টা থেকে গতকাল বিকেল পৌনে ৩টার মধ্যে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

আহতদের মধ্যে সাতজন গুলিবিদ্ধ, চারজন বোমা বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ জোনায়েদ (১৫) নামের এক কিশোরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুলি তার মাথার সামনের অংশে বিদ্ধ হয়ে পেছনের অংশে বেরিয়ে গেছে। আহত অন্যরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

চমেক হাসপাতাল ও পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাখাইনে সহিংসতা শুরু হলে সেখানে গুলিবিদ্ধ ও বোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে গত চার দিনে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা আহত ১৭ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে মো. মুছা নামের এক রোহিঙ্গা মারা যায়। অন্যরা বর্তমানে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া গতকাল আরো ১১ রোহিঙ্গাকে হাসপাতালে ভর্তির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মৃণাল কান্তি দাশ বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা গুলিবিদ্ধরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বোমা বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচজন বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছে। তাদের চোখ ও মুখমণ্ডল ঝলসে গেছে।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে চমেক হাসপাতালে আহত দুই রোহিঙ্গাকে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ মুছা নামের একজনের মৃত্যু হয়। শনিবার রাতে আরো চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়।

Comment here