ক্রাইমটেকনাফ

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ইসমত আরা আত্নহত্যা করে : তারপরও ছয় ধরে হয়রানির শিকার নিরীহ মানুষ


নিজস্ব প্রতিবেদক :

ইসমত আরা। টেকনাফের ইসলামাবাদে বসবাসকারী রেজাউল করিমের মেয়ে। ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর নাইট্যং পাড়ার এক প্রবাসীর ভাড়া ঘরের দরজা জানালা বন্ধ গামছা পেচিয়ে আত্নহত্যা করে। ওই রাতে স্বামী ঘরে এসে সাড়া শব্দ না পেয়ে বেড়ার ফাঁক দিয়ে গামছায় লটকানো দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় স্হানীয়রা। পুলিশ ঘটনা স্হলে এসে লাশ উদ্ধার করে । এ সময় স্বামী ওমর ফারুক ও প্রথম স্ত্রীকে পুলিশ থানায় নিয়ে বৈদেশিক নাগরিক আইনে মামলা রুজু করে আদালতে পাঠাই। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক ছৈয়দ হোসনের ছেলে ওমর ফারুক রেজাউল করিমের চায়ের দোকানে চাকুরী করতো। সেই সুবাদে রেজাউল করিমের মেয়ের ইসমত আরার সাথে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে ওমর ফারুক ইসমত আরাকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে। তার আরো একটা স্ত্রী ও সন্তান থাকায় এবং এ ভাবে পালিয়ে বিয়ে করায় মেয়ের সাথেও পরিবারের সদস্যদের সম্পর্ক ভালো ছিল না। ঘটনার দিন দুপুরে ইসমত আরার মা হাফেজা খাতুন মেয়ের ঘরে আসে। ওই সময় মা মেয়ের মধ্যেও বিবাহিত রোহিঙ্গা যুবককে বিয়ে করার বিষয়ে তর্কবিতর্ক হয় বলে স্হানীয়রা জানান। এ ছাড়া ওমর ফারুকের দু” সংসার আলাদা ভাবে থাকলেও বিভিন্ন কারণে টানাপোড়েন চলছিল।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩ রা ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১২ঘটিকায় টেকনাফ থানার পুলিশ পৌর সভার নাইট্যং পাড়ার মুহাম্মদ ইসমাঈলের ভাড়া বাসা থেকে ফাঁসিতে ঝুলে থাকা অবস্থায় ইসমত৷ আরার লাশ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন। ময়না তদন্ত শেষে ইসমত আরার মৃতদেহ তার পিতার নিকট হস্তান্তর করে। এ সময় পুলিশ একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করে । যার নং ০১/১৭-৩-১২-২০১৫। এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে পুলিশ। এ ফাঁকে ২০১৫ সালের ১৫ই ডিসেম্বর কক্সবাজার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিষ্ট্রেট আদালতে পিতা রেজাউল করিম বাদী হয়ে মেয়ে ইসমত আরার স্বামী টেকনাফ পৌর সভার ১ নাস্বার ওয়ার্ডের নাইটং পাড়ায় বসবাসকারী ছৈয়দ হোসনের ছেলে ওমর ফারুক, তার প্রথম স্ত্রী আনোয়ারা বেগমসহ স্হানীয় মৃত আলি জোহারের পুত্র জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ছেতেরা বেগম, ভাড়া বাসার মালিক হাজী সোনা মিয়ার ছেলে সৌদি প্রবাসী ইসমাইল, ছৈয়দ হোসেনের স্ত্রী সাজু বেগমসহ মোট ৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং সিআর -৩৯ /১৫।
বিজ্ঞ আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ কে নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করার জন্য নির্দেশ দেন । পরে নিয়মিত মামলা রুজু করে আগে থেকে আটক ওমর ফারুক ও প্রথম স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে এ মামলায় আটক দেখায় পুলিশ । ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ থাকায় প্ররোচনার ধারায় স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করে।
উক্ত হত্যা মামলা থেকে ঘটনার সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক না পাওয়ায় ওদের পরিবারের বাহিরের অন্য ৪ জন আসামী অব্যাহতি দেন ।
কিন্তু বাদী রেজাউল করিম উক্ত চার্জশিটের বিরুদ্ধে কোর্টে না রাজি দিলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তভার দেয় কক্সবাজার সিআইডি কে প্রদান করে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে ।
এ দিকে নিছক একটি আত্মহত্যার ঘটনায় মেয়ের স্বামী ওমর ফারুক ও প্রথম স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বেশ কয়েক বছর জেল খেটে জামিনে রয়েছে। এখানে অন্য আসামি গুলো একি পরিবারের অন্তরভূক্ত কেউ নয়। তারপরও বার বার মিডিয়ার মিথ্যা অপপ্রচার করে মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন,
” ঘটনার মূল মানুষ গুলোর সাথে অপরাপর বিবাদীরা কোন ভাবে সম্পৃক্ত নই। তা ছাড়া দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে এটি আত্মহত্যা। এখানে ওই ঘরে নিহত শুধু একাই ছিল। বাহিরের লোকজনের সাথে তো ওই মেয়ের কোন ঝগড়া বিবাদও ছিল না। তারপর মামলা করার মানে হচ্ছে আর্থিক ও মানসিক ভাবে হয়রানি করা। ” তারাও মিথ্যা মামলায় জড়িত করে হয়রানি করার জন্য তীব্র নিন্দা জানান।

Comment here