ক্রাইমটেকনাফ

শালিস-বিচার-মামলা-কোর্ট মানছে না স্বামী হারুন : দফায় দফায় নির্যাতনের শিকার জোসনা


টেকনাফ প্রতিনিধি :
স্বামীসহ শ্বশুড় পক্ষের লোকদের কয়েক দফা হামলায় আহত জোসনা আক্তার (২৩) দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সে বিচারের আশায় সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। বিয়ের সপ্তাহ পর থেকে জোসনার কপালে মারধর, অত্যাচার, নির্যাতন চলে আসছে। স্থানীয়দেও মাঝে শালিস বিচার বা থানায়-কোর্টে
মামলা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী জোসনার। কিন্তু বরাবরই ঘটনার আড়ালে থেকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়িয়ে কৌশলে আইনের তোয়াক্কা করছে না স্বামী মো: হারুন। টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের রুহুল্ল্যারডেবা এলাকায় ঘটনা এটি।
স্থানীয় একাধিক সুত্র ও সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মো: হারুন (২৫) সাবরাং ইউনিয়নের রুহুল্ল্যারডেবা গ্রামের নজির আহমদের ছেলে। তার সাথে ২০১৯ সালের ৬ মে ১২ লাখ টাকা দেনমোহর ধায্য করে বিয়ে হয় পাশের গ্রাম পেন্ডল পাড়ার জহির আহমদের মেয়ে জোসনা আক্তারের সাথে। বিয়ের সপ্তাহ পেরুতে না পেরুতে শুরু হয় যৌতুকের দ্বন্দ্ব। এ নিয়ে শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কয়েকদফা ঝগড়াবিবাদ। ২০১৯ সালের ১৫ মে ও ১১ জুলাই দু’ লাখ টাকা দাবী করে স্ত্রী জোসনাক দু দফা মারধর করে আহত করে স্বামী হারুন। এ ঘটনা জোসনা আক্তার শ্বশুড় নজির আহমদ ও ভাসুর মো: শফি ও মো: রফিককে অবহিত করে। কিন্ত উল্টা বিপত্তি ঘটে। শ্বশুর পক্ষের লোকজনও যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। এসব ঘটনায় কোন উপায় না পেয়ে জোসনা আক্তার টেকনাফ মডেল থানায় জি আর মামলা নং-৫৮৭/১৯ দায়ের করে। এ মামলায় স্বামী হারুনসহ বেশ কয়েকজন আটক হয়ে কারাভোগ করে। এ ফাকেঁ শ্বশুড় পক্ষের লোকজন কৌশলে জোসনাকে অভয় দেয় যে, এ ধরনের আর ঘটনা আর ঘটবে না। সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করবে। সবাই জামিনে বের হয়ে আসে। কিন্তু জামিনে বের হয়ে আসার কিছু দিন পর আবার শুরু হয় জোসনার উপর শ্বশুড় পক্ষের নির্যাতন। স্বামী স্ত্রীর ভরনপোষন দেয়া বন্ধ করে। বিভিন্ন সময় মামলা দিয়ে হয়রানি করার তুলনা দিতে থাকে। অত্যাচার সইতে না পেরে এক পর্যায়ে স্বামী ছেড়ে আলাদা বসবাস করতে থাকে জোসনা। নিজের ঘরে একটি পার্লার খুলে বৃদ্ধ পিতা জহির আমদের দেখভাল করতে থাকে। একদিকে মামলা চলমান অন্য দিকে স্বামীর সাথে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় অনেকটা অনিচ্ছয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে জোসনা। যৌতুক দাবীর মামলা করার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে আরো ছোটখাট বেশ কয়েকটি ঘটনা শ্বশুড় পক্ষের লোকজন ঘটায়। কিন্তু জোসনার কোন দায়িত¦শীল অবলম্বন না থাকায় সে সবকিছুতে ধৈর্য্য ধারন করতে থাকে।
এর মধ্যে ২০২১ সালের গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে স্বামী হারুনের নেতৃত্বে শ্বশুড় পক্ষের লোকজন জোসনার বসতঘরসহ পার্লাওে হামলা চালায়। ওই সময় ওখানে জোসনা ও আপন ভাইপো মো: রুবেল সেখানে অবস্থান করছিলো। সন্ত্রাসী হামলা রুবেল পালিয়ে রক্ষা পেলেও রক্ষা পায়নি ফুফু জোসনা । এ ঘটনায় সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে জোসনার পায়ে, মাথা ও শরীরে মারাত্বক জখম করে। ঘরের ও ভিটের ঘেড়া বেড়ার গেইট ও টিন কেটে ফেলে। ঘর ও পার্লারের অভ্যান্তরে ক্যাশ টেবিলের ড্রয়ার থেকে ছিনিয়ে নেয় নগদ ৭৫ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল সেট ও ব্যবহারের র্স্বণালংকার। খবর পেয়ে স্থানীয় আত্বীয়স্বজনরা ঘটনাস্থলে আসতে আসতে সন্ত্রাসীরা সটকে পড়ে। পরে টেকনাফ মডেল থানায় পুলিশ ঘটনস্থল পরিদর্শণ করে। এ ঘটনায় কক্সবাজার আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করেছে বলে জানিয়েছে জোসনা আক্তার। মামলাটি তদন্তাধীন বলেও জানান তিনি।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) মো: হাফিজুর রহমান বলেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আগে থেকে মামলা চলমান তাই এ ঘটনার বিষয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ভুক্তভোগ ওই নারীকে।
এদিকে এ ঘটনায় বিষয়ে খোজঁ নিতে গিয়ে জানা যায়, কয়েক বছর সৌদি আরব কাটিয়ে টেকনাফ ফিরে আসেন জোসনা আক্তার। সৌদি ফেরত নারী হিসেবে অর্থকড়ি রয়েছে এমন আশায় বিয়ে করে হারুন। কিন্তু সে আশায় ঘুড়েবালি। এরপর স্বপ্নভংগ। তারপর শুরু নির্যাতন। এ ছাড়া মো: হারুনসহ পরিবারের সদস্যরা বেশির ভাগই মাদকাসক্ত ও ইয়াবা পাচারের সাথে জড়িত। এদের হাতে রয়েছে বেশ কাচাঁ টাকা। এরা বিভিন্ন সময়ে নারীদেও ব্যববার করে ইয়াবা পাচার করে থাকে। এদের বিরুদ্বে রয়েছে মাদক একাধিক মামলা। গ্রামের এলাকায় বিভিন্ন নারীদের নিয়ে মাদকের জলসা অনুষ্ঠান উঠতি য়ুবকদের বিভোর করে মাদক পাচারসহ অপর্কম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের সশস্ত্র গ্যাং থাকায় কেউ মুখ খোলার সাহস করে না। এতে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হারুনের পরিবার। তবে এসব বিষয় অস্বীকার করেছে মো: হারুনের পিতা নজির আহমদ। পারিবারিক শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলেও দাবী করেন।

Comment here