জাতীয়টেকনাফসারাদেশ

শাহপরীরদ্বীপে প্রতিপক্ষের আগুনে নিংস্ব পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন :বিক্রিত জমি কেড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা

টেকনাফ প্রতিনিধি:
সাবরাংয়ের শাহপরীরদ্বীপ কোনারপাড়ায় আগুনে পুড়িয়ে ভস্মিভুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এদিকে আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রি তার বসতবাড়ী পুড়িয়ে সর্বস্ব হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে অপরদিকে বসত ভিটে কেড়ে নিতে প্রতিপক্ষের অব্যাহত হুমকি ধামকিতে উদ্বেগ আতংকে রয়েছে। ঘটনার ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসনসহ কেউ সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। কোনো রকমের সহায়তা না পেয়ে চরম দু:খ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। শুধুমাত্র মারোত নামে একটি সংগঠন তাদের সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে ।
গত ৬মার্চ ভোররাত আনুমানিক ২টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ কোনাপাড়া এলাকায় বিক্রিত জমি পূনরায় দখল করার পাঁয়তারা ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘুমন্ত অবস্থায় প্রতিপক্ষরা বসতবাড়ী পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
এ সময় বাড়ীর মালিক ও পরিবারের সদস্যরা প্রাণে রক্ষা পেলেও বাড়িতে থাকা নগদ টাকা, জমি ক্রয়ের মূল স্ট্যাম্পসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র পুড়ে ভস্মিভুত হয়ে আনুমানিক ২০ লাখ টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
এঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মালিক আব্দুল কুদ্দুস বাদী হয়ে ৬ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- সিআর ৯২/২০২২।
আসামীরা মামলা প্রত্যাহার করিতে চাপ দিচ্ছে। মামলা প্রত্যাহার না করিলে অভিযুক্তরা উল্টো ক্ষতিগ্রস্থ আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রি ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে যে কোন মুহুর্তে তাদের (বাদীর) বসত বাড়ীতে কৌশলে মাদক দিয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীকে আটক করিয়ে দেবে মর্মে প্রকাশ্য হাঁকাবকা করছে। এছাড়া ২৩ মার্চ সকালে প্রকাশ্যে দিবালোকে ওই মামলার ১নং বিবাদী আলমগীরের নেতৃত্বে অপর আসামীরা আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রির বসতভিটে জবর দখলের উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র, লোহার রড, লাটি ও দা হাতে প্রকাশ্যে দিবালোকে হামলা চালায়। তখন বসতভিটায় থাকা আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রীর স্ত্রী পারভীন আকতার শৌর চিৎকার করিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে এবং তাৎক্ষনিক শাহপরীরদ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির একটি টিম ঘটনাস্থলে আসলে তারা পালিয়ে যায়। আসামীরা পালিয়ে যাবার সময় যে কোন মুহুর্তে আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রীর বসতভিটে কেড়ে নিবে এবং হত্যা করিয়া লাশ গুম করিবে বলে হাঁকাবকা করিতে থাকে। এ ঘটনায়ও টেকনাফ মডেল থানায় অপর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় প্রবীন মুরব্বী ও জমি ক্রয়ের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী আবু তালেব, সোলায়মান, ছৈয়দ করিম চৌকিদার এ প্রতিবেদককে জানান, ২০/২২ বছর আগে মকবুল আহমদ (প্রকাশ) মকবুল মাঝি হতে আবদুল কুদ্দুস মিস্ত্রি আন-রেজিষ্ট্রার্ট স্ট্যাম্প মুলে ২০শতক জমি ক্রয় করেন। মকবুল মাঝি পরবর্তীতে জমির কাগজ পত্র নিয়ে সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কথা থাকলেও তাহার ক্রয়কৃত সম্পত্তি ও টাকা আত্মসাত করার কু-মানসে সময় ক্ষেপন করে থাকে এবং পরে জমি রেজিষ্ট্রি দিবে না মর্মে জানায়। এনিয়ে ইতিপূর্বে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে একধিকবার শালিস বৈঠকও হয়। যাহার স্বাক্ষী প্রমাণও আছে। ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ীর মালিক আবদুল কুদ্দুস জানান, জমি রেজিষ্ট্রি বিষয়ে রবিবার (৫মার্চ) অভিযুক্তদের সাথে তর্কবিতর্ক হলে ভোররাতে আমার বাড়ীতে কৌশলে তারা আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্ঠা করে। ঘটনার সঠিক তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান স্থানীয়রা।
অপরদিকে জমি বিক্রেতা এজাহার মিয়ার পুত্র মকবুল আহমদ ও তার কন্যা ছেনুয়ারা বেগম বিক্রিত জমির উপর লোভে ভস্মিভুত হইয়া উক্ত অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট এর আদালতে, কক্সবাজার এমআর মামলা নং- ৫০৯/২০২২ কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারী করে। স্বারক নং- ৯৯১/২০২২/এডিএম তারিখ-২১-০৩-২০২২ ইং। উক্ত আদেশ মতে
ইউপি মেম্বার রেজাউল করি রেজু জানান, কুদ্দুস মিস্ত্রি ও অভিযুক্তদের মাঝে দীর্ঘদিন জমি বিরোধ চলছে। প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তারাই (প্রতিপক্ষরা) জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে বসত বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আশংকা করা যায়।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামী হাফেজ উল্লাহকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং অন্যান্য পলাতক আসামীদের আটক করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভেজ চৌধুরী জানান, বিষয়টি আমি অবগত নয়। এখন শুনেছি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য জরুরী সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।

Comment here