জাতীয়

শেখ হাসিনার রানিংমেট কাদের, বিদায় আশরাফ

1001015_07_sheikh_hasina-696x418

বিশেষ প্রতিনিধি।।

হঠাৎ নাটকীয়ভাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় নেতাকর্মীরা উল্লসিত হয়ে উঠেছেন। আসন্ন কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক থেকে বিদায় প্রেসডিয়ামে যাচ্ছেন, শেখ হাসিনার নতুন রানিংমেট হিসেবে সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন ওবায়দুল কাদের। শনি ও রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে ব্যাপক জাকজমকপূর্ণ আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। ৪০ হাজার ডেলিগেট, কাউন্সিলর কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। ৬ হাজার দলীয় স্বেচ্ছাসেবক শৃঙ্খলা রক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছেন। গোটা ঢাকা নগরী রঙ বেরঙের পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ স্লোগানসহ সম্মেলনের সাফল্য কামনা করা শুভবার্তা শোভা পাচ্ছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি দিয়ে বিশাল বিশাল ব্যানার ও তোরণ শোভা পাচ্ছে পুরো দেশজুড়েই।

ঢাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। ১৪ টি দেশের ৪৬ জন বিদেশি রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অতিথি হয়ে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে এই কাউন্সিলকে নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনও নিয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বিগত দু’টি কাউন্সিলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দলীয় সভানেত্রী নির্বাচন করেছিলেন। এবারের কাউন্সিলে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের রাজনীতি ও নির্বাচন মোকবিলায় নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে সক্রিয় নেতৃত্বনির্ভর কমিটি উপহার দিতে যাচ্ছেন। বুধবার রাতে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বছরের পর বছর যোগাযোগ রক্ষা করা ওয়াবদুল কাদেরকে শেখ হাসিনা সাধারণ সম্পাদক করার সবুজ সংকেত দিয়েছেন।

জানা যায়, তিনি গণভবনে ওবায়দুল কাদেরকে বলেছেন, ‘বিগত সম্মেলনে তোমাকে সাধারণ সম্পাদক করতে পারিনি। এবার তোমাকে দেয়া কথা রাখবো।’ এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের নেতাকর্মীদের কাছে সম্মানিত হলেও দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত যেতেন না। সংগঠনকে পর্যাপ্ত সময় ও কর্মীদর্শনে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। তবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সভাপতিমণ্ডলীতে রাখা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হলে নেতকর্মীরা যখন তখন তাদের অভাব, অভিযোগ, সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারবেন বলে এই সংবাদে খুশি হয়েছেন। দলের কার্যালয় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নেতাকর্মীদের উৎসবমুখর সরব উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। এবারের মতো বর্ণাঢ্য, উৎসবমুখর, ব্যয়বহুল, জমকালো আয়োজন অতীতের কোনো সম্মেলন হয়নি।

সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের যে নির্বাচিত হচ্ছেন- নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজকে বলেন, ‘ আকাশে চাঁদ উঠলে তখন দেখা যাবে।’ জানা যায়, সম্মেলনের ২য় দিন রোববার শেষ অধিবেশনে নেতৃত্ব নির্বাচন পর্বে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ৮ম বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তিনি যদিও দলের সভাপতি পদ থেকে বারবার বিদায় নেবার কথা বলছেন। তবুও পর্যবেক্ষক ও দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, সেই সুযোগ শেখ হাসিনার নেই। কারণ দলের নেতাকর্মীই নয়; মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির কাছে তিনিই ঐক্যের প্রতীক। তার বিকল্প তিনি নিজেই। এই মূহুর্তে দলে তার যে নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা তা সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। এমনকি রাষ্ট্র পরিচালনায় উন্নয়নের যে বিশাল কর্মযজ্ঞ তিনি হাতে নিয়েছেন তাতে টানা ৩৫ বছর ধরে দলের নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনাকেই এগিয়ে নিতে হবে।

৮১‘ সালের কাউন্সিলে তিনি যখন ঐক্যের প্রতীক হয়ে আসেন, তখন দলের জনপ্রিয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার রানিংমেট হয়েছিলেন। পরবর্তী কাউন্সিলগুলোতে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, জিল্লুর রহমান, আব্দুল জলিল ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার রানিংমেট হিসেবে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

৬৯‘ এর ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে পথ হাঁটা ওবায়দুল কাদের ৭৫ পরবর্তী দু:সময়ে কারাগারে বসেই ঐহিত্যবাহী ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ৮১’ সাল থেকেই শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় নিরন্তর উর্ত্তীণ ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান। নিজের নেতৃত্বকে বিকশিত করে বারবার সরকার ও দলে সাফল্যের মুকুট পড়েন।

বর্তমানে সরকার ও দলের জনপ্রিয় মন্ত্রী ও নেতা ওবায়দুল কাদেরই হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ হাসিনার রানিংমেট। এবারের কাউন্সিলে তারুণ্য ও নারী নেতৃত্বের দাপট বাড়ছে বলে শোনা যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের রানিংমেট হলে বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্ম সজীব ওয়াজেদ জয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিপ্লবের নায়ক হিসেবে সংগঠনে নেতৃত্বে অভিষিক্ত হচ্ছেন। এমনকি শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের পুত্র সোহেল তাজসহ ক্লিন ইমেজের যে নবীন শক্তি যুক্ত করা হচ্ছে তাতে দলে রক্ত সঞ্চালনই বাড়বে না; নেতাকর্মীদের ভাষায়, সংগঠনে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হবে। শেখ হাসিনার সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরও দলের দু:সময়ের পথের সাথী ও সংগঠকদের ভালো করেই চিনেন। এতে করে দলীয় কর্মকাণ্ডে সুযোগ পেতে তাদেরও সুবিধা হবে।

Comment here