আন্তর্জাতিকজাতীয়

শোকের আগস্ট শুরু ‘এসেছে কান্নার দিন, ঋণ আজ শোধ করো অনন্ত ক্রন্দনে’

নিজস্ব প্রতিবেদক :

‘এসেছে কান্নার দিন, ঋণ আজ শোধ করো অনন্ত ক্রন্দনে’

‘এসেছে কান্নার দিন, কাঁদো বাঙালি কাঁদো/জানি, দীর্ঘদিন কান্নার অধিকারহীন ছিলে তুমি/হে ভাগ্যহত বাংলার মানুষ, আমি জানি/একুশ বছর তুমি কাঁদতে পারোনি। আজ কাঁদো/আজ প্রাণ ভরে কাঁদো, এসেছে কান্নার দিন/দীর্ঘ দুই-দশকের জমানো শোকের ঋণ/আজ শোধ করো অনন্ত ক্রন্দনে/’—লিখেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ‘আগস্ট শোকের মাস, কাঁদো’ কবিতায়। বছর ঘুরে বাঙালি জাতির জীবনে এলো সেই শোকাবহ আগস্ট। পৃথিবীর কোনো জাতির ইতিহাসে এমন শোকাবহ আগস্ট আর নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালির প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহধর্মিণীসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যকেই ঘাতকচক্র নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। সেদিন শিশু রাসেলকেও বর্বর ও নৃশংস বিপথগামী কিছু সেনা বাঁচতে দেয়নি। ভাগ্যগুণে দেশের বাইরে থাকায় সেদিন ঘাতকদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সেই শোকের, লজ্জার, কালিমার আগস্ট মাস শুরু হলো আজ বুধবার থেকে। মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শোকাবহ আগস্ট পালন করবে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায় বিপথগামী সেনা সদস্যরা। হামলায় বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও নাতি সুকান্ত সেরনিয়াবাত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আত্মীয় আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও সেনা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল।

কলঙ্কময় দিনটি স্মরণে এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ঘাতকরা শুধু এদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাই করেনি, হত্যা করেছিল বাঙালি জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অগ্রযাত্রা, সমৃদ্ধি ও সুন্দর আগামীর স্বপ্নকে। একটি সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে সোনার বাংলা বিনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, ১৫ আগস্ট খুনিদের বুলেট বাঙালির সেই স্বপ্নকে হত্যা করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শত বছরের একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্বের দরবারে বাঙালিদের বীরের জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে দেশি ও বিদেশি চক্রান্তের মাধ্যমে ঘাতকরা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে বাঙালি জাতির কপালে কলঙ্কের তিলক পরিয়ে দেয়।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘খুনিরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের অন্যতম সহযোগী জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর জাতি হিসেবে আমরা বিচারহীনতার কলঙ্ককের বোঝা বহন করেছি। জাতির পিতার কন্যা দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন।’

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধুর ৪৩তম শাহাদাত্বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালনের জন্য দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তার সব সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটিকে স্মরণ ও পালন করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।

Comment here