কক্সবাজারজাতীয়টেকনাফসারাদেশ

সিনহা হত্যায় আদালতের রায়: প্রদীপ -লিয়াকতের ফাঁসি: যাবজ্জীবন -৬, বেকসুর খালাস-৭

মুহাম্মদ জুবাইর:
অবশেষে দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। সোমবার বেলা ১:৫০ মিনিটের দিকে মামলার বাদীনি মেজর সিনহার বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস আদালতের এজলাসে প্রবেশ করেন। ২:২০ ঘটিকাশ রায় ঘোষণা শেষ হয়।
রায় ঘোষণার সময় ১৫ জন আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামিগন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। খালাস প্রাপ্ত আসামি গন আনন্দে উৎফুল্ল হন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে এজলাস পরিপূর্ণ উৎসুক আইনজীবী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণা করা হয়। এ সময় রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এ্যাডঃ মোহাম্মদ ফরিদুল আলম (পি পি), মোজাফফর আহমদ ( এডিশনাল পি পি), জিয়াউদ্দিন আহমেদ ( এ পি পি), এ্যাডঃ মোহাম্মদ জাহাংগীর, এ্যাডঃ মোহাম্মদ মোস্তফা জেলা ও দায়রা জজ আদালত কক্সবাজার।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ আদেশ ঘোষণা দেন।
আদেশে টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কূমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে ফাঁসির আদেশ ও ৫০হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন আদালত। এসময় প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে আইনজীবী চন্দন দাস, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত উপস্থিত ছিলেন।
অপর ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেয়। যাবজ্জীবন কারাদন্ড দোওয়া আসামীরা হচ্ছে, নন্দদুলাল, আয়াজ, নিজাম, নুরুল আমিন, সাগর দেব, রুবেল শর্মা। তাদের পক্ষের আইনজীবী দিলীপ কুমার দাস, আইনজীবী শিফন কুমার, আইনজীবী শামসুল আলম ও উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া অপর ৭ আসামীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। খালাস পাওয়া আসামী হচ্চে লিটন মিয়া, সাফানুল করিম, মামুন, শাহজাহান, রাজিব, মাহমুদ, কামাল। তাদের পক্ষের আইনজীবী মমতাজ আহমেদ, আইনজীবী জাকারিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ডিজিএফআই , র‍্যাবসহ সিভিলে অবস্থানরত আর্মির অফিসারদের আনন্দে উৎফুল্ল দেখা যায়।
বহুল আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণার সময় সকাল থেকেই কক্সবাজার আদালতে ছিলেন মামলার বাদীনি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। রায়ের পর পর আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
মামলার বাদী সাংবাদিকদের বলেন, যে সাতজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হলো, তারা একেবারে নিরপরাধ নই। তাদের ও কিছু সাজা হতে পারত। রায়ে নয়, রায় কার্যকর হলেই সন্তুষ্টি মিলবে বলে জানিয়েছেন।
দুই প্রধান আসামির ফাঁসির রায়ের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, কিন্তু সাতজনের খালাসে সন্তুষ্টি নই।
সারাদিন দেশও বহির্বিশ্ব অবস্থানরত সাধরন মানুষের দৃষ্টি ছিল কক্সবাজার দায়রা ও জজ আদালতের দিকে। তারাও রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন দ্রূত রায় কার্যকর করে ন্যায়,বিচার নিশ্চিত করা হোক।
মামলার রায় ঘোষনার পর সুত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ আগস্ট ওসি প্রদীপ কূমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য, প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এরপর ২০২০ সালের ২৪ জুন চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেব আত্মসমর্পণ করলে এ মামলার ১৫ আসামিই আইনের আওতায় আসেন।
গত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা দায়ের করে।
ঘটনার পাঁচ দিন পর ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এ চারটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।
পরে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে।
গত ২৭ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। যা শেষ হয় গত ১ ডিসেম্বর। পরে গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় আসামিদের ৩৪২ ধারায় বক্তব্য গ্রহণ।
#####

Comment here