এক্সক্লুসিভ

স্বাধীনতার চেতনাবিহীন উন্নয়ন বৃথা

টেকনাফ ভিশন ডেস্ক:মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের অনেকেরই আন্তরিক ভালোবাসা, অহম, ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা ২০১৩-এর গণজাগরণের পর মুক্তিযুদ্ধ প্রবলভাবে জাতির সামনে চলে এসেছে। এর আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতিতে কিছুটা থাকলেও জনসাধারণের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় ছিল। এর অন্যতম কারণ ৭৫ পরবর্তী সরকারের কিছু কূটসিদ্ধান্ত। সে সময় কৌশলে মুক্তিযুদ্ধকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রচার ও প্রসার ঘটানো হয়েছে। বিভিন্ন কায়দার অত্যন্ত কৌশলে ধর্মের সাথে মুক্তিযুদ্ধকে মিশিয়ে জাতির এই মহান অর্জনকে সুনিপুণভাবে মলিন করতে সক্ষম হয়েছে দেশবিরোধীরা।
ভাবতে অবাক লাগে একাত্তরে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তাদেরই দোসর এ দেশে মন্ত্রী হয়েছে। হয়ত একদিন প্রধানমন্ত্রীও হতো! এ থেকেই সহজে অনুমান করা যায় বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধারা কতটা মলিন। ২০১৩ সালের পর থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য প্রচার, ইতিহাস বিকৃতি কয়েকশ গুণ বেড়ে যায়। এতে সাময়িক ফায়দা তারা পেলেও তাদের আসলে ক্ষতিই হয়েছে, হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রবল আগ্রহী কিছু মানুষ নিজের চেষ্টায় জামায়াত-বিএনপির অপপ্রচার, মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্য বের করে আনছে। আর এভাবেই শেষ পর্যন্ত কেঁচো খুঁড়তে বের হয়ে আসছে সাপ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা এখন প্রকাশ্যে এসেছে; যদিও প্রায় তিন যুগ পরে। ভালো। পজেটিভ। রাজাকারদের বিচার হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা করা যাচ্ছে। কিন্তু যে সরকার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এতটা আন্তরিক, এতটা ঝুঁকি নিয়ে রাজাকারদের বিচার করছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কতটা সফল- এ প্রশ্ন থেকেই যায়।
আমার তো মনে হয় সরকার এখানে ব্যর্থ। রাজাকারের বিচার করলে, মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বাড়ালে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বছরে দুই-তিনটা বড় ইভেন্ট করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হবে এটা ভাবা ঠিক নয়। সময় বলে এভাবে হয়ওনি। হয়নি যে তার প্রমাণ, দেশে নিত্যনতুন জঙ্গীর সংখ্যা বাড়ছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এত বছরের সুক্ষ্ম, সফল মিথ্যা প্রচারণা, বিকৃতি, চেতনার বিপরীত প্রচারের ফলে যে আবর্জনা জ্যামিতিক হারে বেড়েছে তা তো এমনি যাবে না। প্রশ্নই আসে না। যদি তেমন হতো তবে জঙ্গীর সংখ্যা এত বাড়তো না। স্বাধীনতার চেতনায় সাম্প্রদায়িকতা বড় একটা দৈত্য হয়ে ঘাড়ে চেপে বসেছে।
৭৫-পরবর্তী আবর্জনা পরিস্কার করার জন্য দরকার আধুনিক প্রচার। বিনোদন থেকে ধর্ম, রাজনীতি থেকে বিচার সব জায়গায় প্রচারের সাথে সাথে আরও কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। না হলে বাতাসে বাতাসে আবর্জনা সরতে আরও কয়েক যুগ লেগে যাবে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, রাজাকার নিয়ে এত কিছু হচ্ছে, সাধারণ মানুষও কমবেশি এ নিয়ে কথা বলছে তবু শিক্ষিত, জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তি সমাবেশ করতে গিয়ে শহীদ মিনারের মূল বেদীতে জুতা নিয়ে উঠে পড়ে। কদিন আগেও এমন হয়েছে। যারা এমন করেছেন তারা দেশপ্রেমিক, প্রগতীশীল, অসাম্প্রদায়িক। তাদের পরিচয় অন্তত এ কথা বলে। তাহলে তারা এমনটা করলেন কেন?
আমার ধরণা দীর্ঘ দিনের অভ্যাসে। কৌশলে কয়েক যুগ অভ্যাস করানো হয়েছে। তাই আজও অভ্যাসে জুতা নিয়ে শহীদ বেদীতে উঠে যায় তারা। সচেতন মানুষের যদি অবস্থা এমন হয় তবে প্রান্তিক, শ্রমজীবী, স্বল্পশিক্ষিত এবং ব্রেন ওয়াশ হওয়া মানুষগুলোর কী অবস্থা? মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া এ অভ্যাসগুলো বের হতে অনেক সময় লাগবে। হয়তো পুরো বের হবে না। কিন্তু কার্যকরী ব্যবস্থা নিলে এ অন্ধকার থেকে বের করে আনা সম্ভব।
বিজয় দিবস নিয়ে এ মাসে অনেক অনুষ্ঠান হবে। সভা-সমাবেশ হবে স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু মগজে ইনজেক্ট করা বিষাক্ত বিভ্রান্ত ভাইরাস বের করতে হলে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সরকারের উচিত এখনই এ দিকে নজর দেওয়া। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের উপর দিয়ে পাকি বাতাস চলাচল করলে উন্নয়ন আসলে বৃথা। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের সাথে দরকার একই গতির বাংলা বাতাস, মুক্তিযুদ্ধের বাতাস, মুক্তিযোদ্ধার বাতাস। এ বাতাস তৈরির কার্যক্রম নিতে আর কত দেরি? নাকি কর্তা ব্যক্তিরা ভাবছেন আপনা আপনিই সব ঠিক হবে?
তাদের জন্য একটা বাক্য দিয়ে শেষ করছি : বিষাক্ত বৃক্ষ আপনা আপনি বাড়ে কিন্তু প্রয়োজনীয় বৃক্ষের অনেক যত্ন নিতে হয়। অনেক যত্ন নেওয়ার পরও অনেক সময় ফল ধরে না।

Comment here