টেকনাফসারাদেশ

হ্নীলায় রোহিঙ্গা অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবী

সাদ্দাম হোসাইন:
হ্নীলায় এক রোহিঙ্গাকে গত ৩দিনধরে স্বশস্ত্র দূর্বৃত্ত দল অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবী করছে। এতে অসহায় রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যরা চরম আতংকে রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমুহে নানা অপকর্ম অব্যাহত থাকায় আতংকে অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
জানা যায়,উপজেলার হ্নীলা নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের আওতাধীন আলীখালীতে আশ্রয় নেওয়া সি-বøকের শেল্টার নং-ডি-৫৫ এবং কার্ড নং-২৬৫৫, মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মন্ডু থানার হাইসুরাতার মৃত মোহাব্বত আলীর পুত্র ওমর হাকিম (৫০) স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ১ মেয়েসহ পুত্রবধু এবং নাতীদের নিয়ে আশ্রয় নেয়। গত শুক্রবার রাত ১১টারদিকে স্বশস্ত্র মুখোশধারী একটি দূবৃর্ত্ত দল রোহিঙ্গা বস্তিতে এসে তোমরা ইয়াবা ব্যবসা কর। আমাদের টাকা দাও এবং ঘরে লুকায়িত স্বর্ণ বের করে দাও বলে ব্যাপক মারধর করে। এমন কি বাড়ির মাটি খুঁড়ে টাকা ও স্বর্ণ না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এমতাবস্থায় শোরগোলে রোহিঙ্গারা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে ২ রাউন্ড ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে বাড়ির কর্তা ওমর হাকিমকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন মুঠোফোন (যার একটি নং-০১৬৩৪-১০৮৭৭৯) হতে মোটাংকের চাঁদা দাবী করে। এই খবর কাউকে জানালে এবং তাদের দাবীকৃত টাকা দিতে না পারলে অপহৃত ব্যক্তিকে জবাই করে হত্যার হুমকি দেয়। এই হুমকির পর পরই অসহায় রোহিঙ্গা পরিবারটি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ভয়ের কারণে এখনো পর্যন্ত আইন-শৃংখলা বাহিনীর শরণাপন্ন হয়নি। এ সংবাদ পেয়ে রবিবার সাংবাদিকদের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে ঠিক সেই মুর্হুতে দুপুর ১টায় উক্ত মুঠোফোন হতে দাবীকৃত চাঁদার পরিমান কমিয়ে ৫লক্ষ টাকায় এসে থামেন। সাংবাদিকেরা এই কথোপকথনের আড়ি পাততে চাইলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ঘটনাস্থলেই অপহরণকারী চক্রের কোন সদস্যের আনা-গোনা রয়েছে।
অপহরণের শিকার ওমর হাকিমের স্ত্রী দিলবাহার বলেন, আমরা ওপারে রাখাইনদের হাতে নির্যাতিত হয়ে সহায়-সম্বল হারিয়ে মুসলিম দেশ হিসেবে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে আমাদেরকে কিছু লোক বিভিন্নভাবে হয়রানী করতেছে। ছেলে রহিম উল্লাহ বলেন, আমরা তো থানা পুলিশ চিনিনা। অপহরণকারীদের ভয়ে কেউ সাহায্য ও করছেনা। কিভাবে এবং কার মাধ্যমে আমার পিতাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাবো। এই ব্যাপারে সকলের সহায়তা কামনা করছি।
উল্লেখ্য, গত ১০ ডিসেম্বর ভোররাতে অস্থায়ী একই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০/১২ জনের স্বশস্ত্র মুখোশধারী দূবৃর্ত্ত দল রোহিঙ্গা আলী জোহারের ঘরে গিয়ে নববিবাহিত পুত্র মোঃ ফিরোজ (২৫), মেয়ে হারেছা বেগম, স্ত্রী আরেফা বেগম (৪৯) ও নববধু মারজানকে মারধর করে। এই ঘটনার কারণে আহত স্বামী ৬০হাজার টাকা ক্ষতি পূরণ দিয়ে ডির্ভোস দেন। অস্থায়ী এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন-শৃংখলা বাহিনী নিয়োজিত না থাকায় অপরাধপ্রবণ এই এলাকার অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠছে। এসব ঘটনায় আতংকিত হয়ে পাহাড়ী পাদদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা এই এলাকা ছেড়ে পালংখালী ও কুতুপালংয়ের দিকে স্বপরিবারে চলে যেতে দেখা গেছে।
এই ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানা অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মাইন উদ্দিন খান বলেন, এই বিষয়ে এখনো কেউ জানায়নি। অভিযোগ পেলেই এই ব্যাপারে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। র‌্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর রুহুল আমিন জানান, এই পরিবারের কোন সদস্য সহায়তার জন্য আসলে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধারে সর্বাতœক সহায়তা দেওয়া হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেকোন ধরনের নাশকতা ও অপরাধ সৃষ্টিকারীদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।

Comment here