এক্সক্লুসিভজাতীয়টক শোসারাদেশ

৫২তম বিজয় দিবসের দ্বারপ্রান্তে দেশ : মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকার জন্য আর কত অপেক্ষা

৫২তম বিজয় দিবসের দ্বারপ্রান্তে দেশ
মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকার জন্য আর কত অপেক্ষা
তালিকা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ও ত্রুটি-বিচ্যুতির যেন অন্ত নেই * মন্ত্রী বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হবে, কর্মকর্তারা মনে করেন শুনানি শেষ করতেই লাগবে কয়েক মাস

 আমিরুল ইসলাম, যুগান্তর:
ক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ শেষ হচ্ছেই না। তালিকা তৈরির জন্য স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার চেষ্টা করেও কোনো কূলকিনারা হয়নি।

এক সরকারের তালিকা অন্য সরকার সংশোধন করে। এভাবে নানারকম যোগ-বিয়োগের ঘটনায় তালিকা কাটাছেঁড়া হয়।

কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের এমন গৌরবময় তালিকা আজও চূড়ান্তরূপ পায়নি। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায়ও এ তালিকা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। এমনকি সরকারের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করা হবে’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আপিল শুনানি নিয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার। তবে আপিল শুনানির কারণে তালিকায় আরও কিছু নাম ঢুকবে। এরফলে শেষ পর্যন্ত সংখ্যাটি ১ লাখ ৮৩ হাজার হতে পারে। এর বেশি হবে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্ত করা নিয়ে নানামুখী তোড়জোড়ের মধ্যে এখন বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের শুনানিতে। মাঠপর্যায়ে শুনানি নিচ্ছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি। একজন স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং অপরজন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতিনিধি হিসাবে একজন মুক্তিযোদ্ধা। ঢাকা ও সিলেট ছাড়া অন্য সব বিভাগে শুনানির মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকা ও সিলেট বিভাগে শুনানি শেষ পর্যায়ে। এখন যেগুলো আপিল হয়েছে সেসব বিষয়ে কাজ করছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এ অবস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, এসব যাচাই-বাছাই ও শুনানি পেন্ডিং রেখে তালিকা চূড়ান্ত করার সুযোগ নেই। এছাড়া কয়েক মাসেও এ বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে ওই অর্থে তালিকা চূড়ান্ত হবে না।

এদিকে মঙ্গল ও বুধবার জামুকা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ মুক্তিযোদ্ধা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শুনানিতে অংশ নিতে এসেছেন। তাদের অনেকেই এতই বৃদ্ধ এবং অসুস্থ যে ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছেন না। খুলনার কয়রা থেকে আগত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রায় ১০ মাস আগে হঠাৎ করে সম্মানি ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে শুনানিতে আমাকে ডাকা হয়নি। তাই আপিল করেছি।’

অপর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, ‘তিনি ১৯৯৫ সালে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু গত বছর তালিকা থেকে তার নাম বাদ পড়ে। সেই থেকে তিনি তালিকাভুক্তির জন্য চেষ্টা করছেন।’

জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল বলেন, ‘যাচাই-বাছাই হয়ে মাঠপর্যায় থেকে তালিকা এখনও আসছে, আমরা শুনানি নিচ্ছি। তবে কবে শুনানি শেষ হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। আবার যাদের জন্য আমরা সুপারিশ করি তারা সবাই যে তালিকাভুক্ত হয় বিষয়টি কিন্তু তা নয়। বরং জামুকার তালিকা থেকে অনেকের নাম বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির একজন সহকারী পরিচালক বলেন, অনেক সময় মাঠপর্যায় থেকে পাঠানো কাগজপত্রে ত্রুটি থাকে। সেগুলো সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকেও এসব প্রস্তাবনার মধ্যে কিছু ভুলত্রুটি চিহ্নিত করে কোয়ারি দেওয়া হয়। এ কারণে জামুকার পাঠানো সবার নাম মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় না।

সূত্র জানায়, গুরুতর একটি অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্ত করার পথে বড় ধরনায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটি হলো ২০২১ সালে ডিজিটাল সিস্টেমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা বিতরণের সময় প্রায় ২১ হাজার মুক্তিযোদ্ধার কাগজপত্রে গরমিলের তথ্য। দেখা গেছে, এনআইডি, মোবাইল, জম্ম তারিখ ইত্যাদির গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে কোনো মিল নেই। ফলে তাদের তথ্য ডিজিটাইজড করা সম্ভব হয়নি। অথচ তারা বছরের পর বছর সম্মানিভাতা নিয়ে আসছিলেন। এরপর নড়েচড়ে বসে মন্ত্রণালয়। তাদের এই ভাতা বন্ধ করে ফের যাচাই-বাছাই শুরু করে মন্ত্রণালয়। যা এখনও চলমান এবং কবে শেষ হবে তা পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না কেউ।

বর্তমানে দেশে ১ লাখ ৯১ হাজার ৫৩২ জন সাধারণ বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসিক সম্মানি ভাতা পেয়ে থাকেন।

Comment here