জাবেদ ইকবাল চৌধুরী , টেকনাফ ভিশন ডটকম :
মিয়ানমানের চলমান ঘটনায় আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আর্ন্তজাতিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাস্ট্র । এ লক্ষ্যে উপায় খুজঁতে কফি আনান কমিশন কাজ শুরু করেছে । বাংলাদেশ শুরু থেকেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। বাংলাদেশী জনগনও আন্তরিকভাবে রোহিঙ্গা কমিউনিটির সাথে সহ অবস্থান করছে। যা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে সীমান্ত অরক্ষিত থাকলে অনুপ্রবেশ ঠেকানো অসম্ভব হয়ে উঠবে। এমনকি দু’দেশের মধ্যে সুসর্স্পক টানাপোড়েনে পড়তে পারে। যা রাজনৈতিক ও আত্বসামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্টদূত মার্শিয়া বার্নিকেট আজ ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শণ কালে সাংবাদিকের সাথে এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এটি তারঁ দ্বিতীয় সফর। এখানে তারঁ প্রতিনিধি টিম দেরীতে সফরে আসলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রথম থেকেই বিষয়টি নজরে রেখেছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যুক্তরাস্ট্র ভূমিকা রাখছে। আর্ন্তজাতিক সমপ্রদায়কে এগিয়ে আসতে কাজ করছে। কফি আনান কমিশন সদস্যরা মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং সমস্যা সমাধানে উপায় খুজ^তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারে আনান কমিশন সদস্য ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের একদিন আগে পরে সফরে কোন যোগসুত্র আছে কি না এমন প্রশ্নে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকেট বলেন, কাকতালীয় ভাবে সফর হয়েছে। তবে সকলেই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখতে এসেছে এবং তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে।
মার্কিন রাষ্টদূত মার্শিয়া বার্নিকেট সকালে লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শণ কালে আন্তজার্তিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত হাসপাতাল, এনজিও ফোরাম পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রম ছাড়াও লেদা বি-বøকের একটি মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম দেখেন এবং শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে কথা বলেন।
লেদা ক্যাম্পের ‘আম্মর বিন ইয়াসের’ মাদ্রাসার শিক্ষক মৌলভী সোলতান বলেন, এখানে রোহিঙ্গাদের জীবন-মান দেশে তিনি মমার্হত হয়েছেন। জীবন মান উন্নয়নে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র সরকার যথাসম্ভব কাজ করে যাবে। লেদা ক্যাম্প পরিদর্শণ কালে রাস্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকেটের সাথে লেদা রোহিঙ্গা বস্তির চেয়ারম্যান ডা. দুদু মিয়া। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় দ্রæত জাতি সংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতি প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তজার্তিক সম্প্রদায়ের তত্ত¡াবধানে হতে হবে।
দুপুরে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও ফোরাম অফিসে মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন। মার্শিয়া বার্নিকেটের সাথে কথা বলা ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা রাইম্যাবিলের শাকের আহমদ, বড় গওজিবিলেরর মোঃ আয়াছের স্ত্রী চেহেরা বিবি, নুরুল আলম , রশিদ আহমদ প্রমুখ। চেহেরা বিবি জানান, সাম্প্রতিক ঘটনায়, তাদের সামনে ১২ বছরের ননদ মোরারমাকে মিয়ানমার সেনা সদস্যরা ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। স্বামী মোঃ আয়াছ ও শ্বশুর রশিদ আহমদকে বেদড়ক পিঠিয়েছে এবং ধরে নিয়ে গেছে। এরপর এদের আর খোজঁখবর পাওয়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ ফাকেঁ চার সন্তান নিয়ে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। কর্তমানে লেদা অনিবন্ধিত ক্যাম্পের ই-বøকের ১২৭ নং কক্ষে অবস্থান করছেন।
মিয়ানমারে সেনা বর্বরতার প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গা নুরুল আলম বলেন, তার সামনে পরিবারে প্রায় ১২ জন নারীকে বিবস্ত্র করে দাড়ঁ করে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। পিতা হয়ে সন্তানের উপর এ ধরনের বর্বরতার স্বাক্ষী হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়ার ছিল শ্রেয় এ কথা বলার সময় তার চোঁখ দিয়ে অশ্রæ গড়াচ্ছিলো।
পরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত টেকনাফ নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শণ করেন এবং কার্যক্রম দেখেন।
নয়া পাড়া শরনার্থী ক্যাম্প ইনচার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব ) মোঃ সাইফুল ইসলাম, ক্যাম্পে সার্বিক কার্যক্রম প্রেজেন্টেশন করেন। এ সময় শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সরকারের যুগ্ম সচিব, এস এস রেজোয়ান আহমদ, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সফিঊল আলম, আইওএম বাংলাদেশস্থ লিয়াজোঁ অফিসার পেপে টেসি সিদ্দিকী, ইউএনএইচসিআর, এনজিও ফোরামসহ বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কক্সবাজারে ২ দিনের সফরে এসেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্টদূত বার্নি কেট। তার সাথে ৮ সদস্য রয়েছে। গত সোমবার বিকালে কক্সবাজার পৌঁছে বিকেল ৫ টায় তিনি জেলা প্রশাসন ও শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলাপ হয় ।
৫ দফা দাবীতে মৌন মানব বন্ধন রোহিঙ্গাদের
এদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকেট নয়া পাড়া শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন কালে শান্তি পূর্ন মৌন মানব বন্ধন করেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় ব্যানার টাঙ্গিঁয়ে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর বর্বরতা বন্ধের দাবী জানান।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গদের নিয়ে দির্ঘ্য দিনের সমস্যার দ্রæত সমাধান , সেনা বাহিনীর অংশীদারিত্ব পাদ দিয়ে প্রকৃত সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরা , রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাদ দিয়ে পাশ করা ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করা এবং রোহিঙ্গাদের হত্যা ধর্ষণ ও নির্যাতন বন্ধসহ ৫ দফা দাবী তুলে ধরেন। নয়া পাড়া শরনার্থী ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোঃ জোবায়ের বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই, আর এর জন্য দরকার নাগরিকত্ব। শান্তিপূর্ণসহ অবস্থান। এটি নিশ্চিত করলে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যাবে। এটির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যাতে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট স্থানে শান্তির্পূণ ভাবে জীবন জীবিকা নিয়ে চলতে পারে তার নিশ্চয়তা আশা করেন।
Comment here