জাতীয়

আপাতত রক্ষা পেল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

নির্বাচিত কেউ শপথ নিচ্ছেন না

শফিক সাফি

আপাতত রক্ষা পেল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থীদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া না নেওয়া নিয়ে জটিলতা কেটে গেছে। ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নির্বাচিত দুই প্রার্থী শপথ নিতে পারেন বলে আভাস দেওয়ায় বিএনপির সঙ্গে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। গতকাল রবিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের শপথ এখন নেওয়া হচ্ছে না। আমি স্পষ্ট করে বলছি, গণফোরামের কোনো সদস্য শপথ নিচ্ছেন না।’

বিএনপির নবনির্বাচিত পাঁচজন প্রার্থী শপথ নেবেন না বলে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের অন্য দুজনের শপথ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, গতকালের বৈঠকের পর তা আপাতত থেমেছে। ফলে আপাতত ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেল ঐক্যফ্রন্ট।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের কেউই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিচ্ছেন না বলে গতকাল সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের দুই সদস্য ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। বিশেষ করে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান হাঁটছেন উল্টোপথে।

মোকাব্বির খান গতকাল  বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর গণফোরামের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তির কোথাও শপথ না নেওয়ার কথা উল্লেখ নেই। এমনকি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বৈঠকের পর যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, সে বিষয়টিও আমার জানা নেই।’ গণফোরামের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পড়ে শুনিয়ে তিনি দাবি করেন, ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. কামাল হোসেনের স্বাক্ষর নেই। মোকাব্বির বলেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রতি তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এর দায় গণফোরামের কাছে। তাই ড. কামাল হোসেন যা বলবেন, তিনি তা-ই শুনবেন। মোকাব্বির জানান, তিনি এবং সুলতান মনসুর যা করবেন একসঙ্গেই করবেন।

মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মো. মনসুর  বলেন, ‘আমি বৈঠকে ছিলাম না। এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।’ তিনি আরো বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন আমাদের নেতা। তিনি বলার পর আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তিনি যা বলবেন, আমি সেটাই করব।’

মতিঝিলে ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শুরু হয়। সুলতান মো. মনসুর ও মোকাব্বির খান ওই বৈঠকে ছিলেন না।

ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৈঠকে ড. কামাল হোসেন স্পষ্ট করে বলেছেন, তাঁদের কেউ শপথ নেবেন না। ভবিষ্যতেও যেকোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা আলোচনা করে নেবেন।

বৈঠকের পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, ‘শপথ নেওয়ার কোনো কথা কখনো হয়নি। কালকে (শনিবার) কিছু মিডিয়া অত্যন্ত ভুলভাবে এটার ব্যাখ্যা করেছে। ড. কামাল হোসেন সাহেব কখনো ঘুর্ণাক্ষরেও বলেননি এই ধরনের কোনো কথা। আমাদের শপথ এখন নেওয়া হচ্ছে না। আমি স্পষ্ট করে বলছি, গণফোরামের কোনো সদস্য শপথ নিচ্ছেন না।’

গত শনিবার গণফোরামের বর্ধিত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের দুই নির্বাচিত প্রতিনিধির শপথগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের যে কথা ড. কামাল বলেছিলেন সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্টু বলেন, ‘ইতিবাচক শব্দটার অর্থটা কী আপনিই বলুন। শপথ নিচ্ছে?’

গণফোরাম শপথ নেবে কি না, এটা স্পষ্ট করতে বলা হলে জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মন্টু সাহেবের বক্তব্য আপনি শোনেননি? কিভাবে বললে স্পষ্ট হবে? উনি বলেছেন, গণফোরামের কেউ শপথ নিচ্ছেন না। আর কিভাবে বললে পরিষ্কার হবে। আমি আবারও বলছি, ঐক্যফ্রন্টের কেউই শপথ নিচ্ছেন না।’

মঙ্গলবারের মিটিং থেকে কর্মসূচি আসবে : আরেক প্রশ্নের জবাবে রব বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট ভাঙবে কেন? ঐক্যফ্রন্ট ছিল, আছে এবং থাকবে। ঐক্যফ্রন্ট জনগণের জন্য যে সাত দফা ১০ দফার আন্দোলন করেছিল সেই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আগামী পরশু দিন (মঙ্গলবার) মিটিং আছে সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সেখান থেকে আমাদের কর্মসূচি আসবে।’

স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান খোকা, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাহেদুর রহমান ও গণস্বাস্থ্য সংস্থার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গণফোরামের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : গতকাল বিকেলে ৩টার পর গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণফোরাম বলেছে, ‘গতকাল (শনিবার) বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে এবং আজ (রবিবার) ছাপা পত্রিকায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় ড. কামাল হোসেনের একটি বক্তব্য নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির ভিত্তিতে এই ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। ড. কামাল হোসেন কোনোভাবেই বলেননি গণফোরাম থেকে নির্বাচিতরা সাংসদ হিসেবে শপথ নেবেন। আশা করি, এই প্রশ্নে আর কোনো ভুল-বোঝাবুঝি থাকবে না।’

মোস্তফা মহসিন মন্টুর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘আমরা স্পষ্টভাবেই বলতে চাই, সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের শপথগ্রহণ প্রশ্নে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনৈক্য নেই।’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তার কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

Comment here