কক্সবাজারপবিবেশ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি

 কক্সবাজার:

ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এই উপলক্ষ্যে এক বিশেষ সভা সোমবার সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। জেল প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিক উক্ত সভায় সরকারি সব দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার সিদ্ধান্ত মতে, জেলার সব উপকূলীয় এলাকার মানুষ আজ সোমবার সন্ধ্যার আগেই নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হবে। একই সাথে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকেও সরিয়ে নেয়া হবে। ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে এই নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসক। জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ এই জনগোষ্ঠী সরিয়ে কাজ শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকা, মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ঘলঘাটা, কুতুবজোম, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়ার সমস্ত ইউনিয়ন, টেকনাফের বাহারছড়া, সাবরাং ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়াসহ আরো কয়েকটি উপকূলীয় এলাকা, চকরিয়া ও কক্সবাজার সদরের পোকখালী, খুরুশকুল এবং সমিতিপাড়ার সমস্ত মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মাইকিংসহ বর্তমানে সচেতনামূলক মিটিং করা হচ্ছে। ‍জেলার ৫৩৮ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলার কয়েকটি উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সাগরে মাছধরা অবস্থায় সমস্ত ট্রলার বা ফিশিংবোটকে কূলে ফিরে আসতে জরুরী নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ইফতার ও সেহরী ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে সমস্ত ইউনিয়ন, উপজেলা ও উপকূলবর্তী এলাকায় মেডিকেল বোর্ড, সিপিবি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, এনজিও সংস্থার সমস্ত সদস্যকে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিজড়ের ঝুঁকি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন জরুরুী ভিত্তিতে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের নং- ০১৭১৭-০৯৪২১৩ ও 0341-64254। কন্ট্রোল রুম থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ সংক্রান্ত সব ধরণের খবরা-খবর পাওয়া যাবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টিম। জরুরী মুহূর্তে বিতরণের জন্য প্রস্তুত রাখা পর্যাপ্ত ত্রাণ। স্থানীয় পর্যায়ে সকল স্তরের জনপ্রতিনিধিকে ঝুঁকি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কারণে জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার ভোরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৭০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মানে হল, সাগরে মাঝারী শক্তির একটি ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসছে, যেখানে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷ ৫ নম্বর বিপদ সংকেতের মাত্রা ৭ নম্বরের সমান, তবে দিক ভিন্ন। অর্থাৎ, সরাসরি পায়রা ও মোংলার দিকে না এসে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ব দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে এই দুই বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর রোববার মধ্যরাতে সেটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় প্রশাসন সকল প্রস্তুতি হাতে রেখেছে। বিপদকালীন জরুরুী মুহুর্তের সকল স্তরের লোকজনকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারপরও আমার অনুরোধ থাকবে স্থানীয় পর্যায়ে লোকজনও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা নিজেদের অবস্থান থেকে সাহায্য-সহযোগিতাসহ নানা ভাবে কাজ করবে।’

Comment here