রোহিঙ্গা সমাচার

আল্লাহ আমাদের বাঁচান

মোঃ আশেকউল্লাহ ফারুকী: teknaf-rohamg-pic
তোমাদের কি হয়েছে ? তোমরা কেন, আল্লাহর পথে লড়াই করছ না, অথচ অসহায় নারী পুরুষ ও শিশুরা ফরিয়াদ করছে, হে আল্লাহ এ জালিম জনপদ থেকে আমাদেরকে বের করে দাও, আমাদেরকে (অভিভাবক) দাও, এবং সাহায্যকারী পাঠাও, (সূরা নিসা-আয়াত ৭৫)। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বে, আন্তজার্তিক নাফ-নদীর তীরে এবং মিয়ানমারের পশ্চিমে বিস্তীর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে দীর্ঘ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার উত্তর দক্ষিণ লম্বা অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দয্যের লীলভূমি আরাকানের অবস্থান। বাংলাদেশের নাফ-নদীর তীর থেকে অনায়সে দেখা যায়, আরাকানের অপরূপ দৃশ্য। যা দেখার জন্য টেকনাফ সীমান্তে ছুটে আসে দেশী ও বিদেশী পর্যটকেরা। ৮০% শতাংশ সংখ্যালগু রোহিঙ্গা মুসলমানের বসবাস এবং অবষ্ট্যি ২০% শতাংশ অন্যান্য স¤প্রদায় দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করে আসছে। উখিয়া পালংখালী সীমান্ত এলাকা থেকে শাহপরীরদ্বীপ বদর মোকাম পর্য্যন্ত ৬৩ কিলোমিটার জুড়ে নাফ-নদীর উপকূলীয় জলসীমানা। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কাশ্মিরের ন্যায় আরাকান প্রদেশ একটি ভূ-স্বর্গ বললেই চলে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আরাকান রাজ্যের মাটি খুবই উর্ভর এবং সার ছাড়া ফসল ও শষ্য উৎপাদিত হয়। মৎস্য সম্পদের জন্য খ্যাত। চিংড়ী ও লবণ ও ধান চাষ করে আরাকানবাসীর জীবিকার প্রধান উপায়। আবহাওয়া স্বাস্থ্য সম্মত। আরাকানের জনগণ মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। তাদের নেই কোন রাজনৈতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা। নেই কোন চিকিৎসা সেবা। একমাত্র নির্ভরশীল আল্লাহর উপর ভরসা করে চলে আরাকানের জনগণ। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীনতা লাভের সময় বৃটেন আরাকানের সার্বভৌমত্ব রেঙ্গুনের কাছে ন্যাস্ত করেন। জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী আরাকানের সার্বভৌসত্ব বার্মা ইউয়িনের কাছে ন্যস্ত করা ছিল অবৈধ। তবে ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার আরাকানকে স্বায়ত্বশাসন প্রদান করেছিল। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয় ১৯৬২ সালে ১ ডিক্রি বলে জেনারেল নে-ইউনের সামরিক সরকার ১৯৬২সালে আরাকানের স্বায়ত্বশীসন রহিত করে এবং পরে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের শুধু দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিনতই করেনি বরং তাদের উপর চলে অত্যাচার নির্যাতন ও নিপীড়ন। এর একমাত্র উদ্দেশ্য তারা সেদেশ ত্যাগে বাধ্য করা। যা আজো অব্যাহত আছে। রাখাইনদের পরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অবস্থান। বৌদ্ধধর্মে আছে, “জীব হত্যা মহাপাপ অহিংসা পরম ধর্ম। রাখাইন স¤প্রদায় এ ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী হলেও কথাও কাজের মধ্যে তাদের নেই। আরাকানের জীব হত্যার বিপরীত মুসলিম হত্যা করে সেখানে রাখাইন স¤প্রদায়কে বসবাস করার উদ্দেশ্যে সুদুরপ্রসায়ী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মিয়ানমারে নোভেল পুরস্কার প্রাপ্ত অংসান সুচি ক্ষমতায় আসার পর রোহিঙ্গা মুসলমানেরা আশা করেছিল, আরাকানের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে এবং রোহিঙ্গাদের উপর রাখাইন স¤প্রদায় এবং সামরিক জান্তার নির্যাতন কমবে। কিন্তু সেই আশা আকাংখা একেবারে নিসফলের পথে। গত ৯ অক্টোবর আরাকানে সীমান্ত রক্ষী (বিজিপির) চৌকিতে কেবা কারা হামলা করে হত্যা অস্ত্র লুট ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো আরাকানবাসীর উপর নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং ধর্ষন চলছে। যাহা আইয়ামে জাহেলিয়াতকে পর্য্যন্ত হার মানিয়েছে। অবশেষে এ অমানুবিক নির্যাতন সহ্ন্য করতে না পেরে দলে দলে রোহিঙ্গা মুসলামানেরা টেকনাফ সীমান্তের দমদমিয়া এলাকা থেকে উখিয়া-পালংখালী সীমানা পর্যন্ত ৩০ কিঃ মিটারের মধ্যে অনুপ্রবেশ করছে। অনুপ্রবেশকৃত রোহিঙ্গারা স্থানীয় লোকালয়ে পাহাড়ে এবং শরনার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে বিজিবি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রশে ঠেকাতে ৬৩ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার এবং নজরদারী বৃর্দ্ধি করেছে। এ সময় অনেক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুশব্যাক ও করেছে। ২৪ নভেম্বর বিজিবির মহাপরিচাল মেজর জেনারেল আবুল হোসেন টেকনাফ স্থল বন্দরে সকাল ১১ টায় সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং এতে তিনি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা মুসলমানেরা যাবে কোথায় ? এমন প্রশ্ন ওদের। যদি, পৃথিবীর কোন ভূখন্ডে তাদের আবাস ভূমি না থাকে, তাহলে তাদের আবাস এখন নদী ও সাগর ব্যতীত বিকল্প কোন স্থান নেই। এসব মন্থব্য তাদের মধ্যে গুরপাক খাচ্ছে। আরাকানের এখন রক্তের বন্যায় ভাসছে নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুদের লাশ। সংবাদপত্রে, অনলাইন ও সামাজিক গণমাধ্যমে তাদের করুন চিত্র ফুটে উঠেছে। এছাড়া বিভিন্ন মুসলিম দেশেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র প্রতিবাদের মূখে আরাকানে রোহিঙ্গা নির্যাতন কিছুটা প্রশমিত হলেও নির্বিচারে নারী ধর্ষণ মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। স¤প্রতি আরাকানের আলোচিত বড় গৌজির বিল পাড়া ৩০ থেকে ৪০ যুবতী নারীদের পরিদেয় বস্ত্র খুলে সামরিক জান্তা কর্তৃক গণহারে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, বলে সে দেশ থেকে পালিয়ে আসা মাজুমা খাতুন সংবাদকর্মীদের কাছে এবং বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন। সে মংডু থানাধীন কিয়ারি প্রাং গ্রামের কামাল হোসেনের স্ত্রী। বর্তমানে সে লেদা আনরেজিষ্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া তার মত নাম না জানা অসংখ্যা নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে নীরবে নিথর জীবনে ভোগছেন। আরাকান রাজ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে জানা যায়, গোটা আরাকানের নির্যাতিত নিপীড়িত হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবার পরিজন নিয়ে নাফ-নদীর পাড়ে এবং বনে জঙ্গলে প্রচন্ড শীতে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং তাদের আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এমতাবস্থায় তাদের সাহার্য্যে কেউ এগিয়ে আসছেনা ওরা শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে ফরিয়াদ করছে, মাবুদ এ জালিম সরকার থেকে আমাদের বাঁচান।

Comment here