আন্তর্জাতিকরোহিঙ্গা সমাচার

ওপারে নিপীড়নের লোমহর্ষক বর্ণনা রোহিঙ্গাদের মুখে

এস এম রানা ও জাবেদ ইকবাল টেকনাফ (কক্সবাজার)

teknaf-pic-001-1

 

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত উপজেলা কক্সবাজারের টেকনাফ। টেকনাফের কোল ঘেঁষে নাফ নদ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চলের। শান্ত এই নদ হঠাৎই অশান্ত হয়ে উঠেছে। তত্পর বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্ট গার্ড সদস্যরা। কোনো রোহিঙ্গা যেন আর অবৈধ প্রবেশ না করে বাংলাদেশে। দেখা গেল ৮-১০টি নৌকা তাদের পাহারায়। ভেতরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী। রাতেই (বৃহস্পতিবার) তাদের ঠেলে দেওয়া হবে মিয়ানমারে। গতকাল নাফ নদের ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল এমনই দৃশ্য। আগে নদে প্রচুর মাছ ধরার নৌকা চোখে পড়লেও এখন একটিও চোখে পড়ে না। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে বর্ডার পাস ও ট্রানজিট পাস নিয়ে দৈনিক তিন শতাধিক মানুষ যাতায়াত করত। এখন সেই পাস ইস্যু বন্ধ থাকায় কার্যত দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত বন্ধ রয়েছে।

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল ও মংডু শহরের উত্তরে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকারি বাহিনীর ভয়াবহ তাণ্ডবে এলাকা ছেড়ে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পেরেছে তারা শোনাচ্ছে গা শিউড়ে ওঠার মতো ভয়াবহ নির্যাতনের কাহিনী। তারা বলছে, জ্যান্ত মানুষ পোড়ানো, বসতবাড়ি জ্বালানো কিংবা নারী ধর্ষণের মতো ভয়াবহ নারকীয় তাণ্ডবের কথা। আর যারা নিজ দেশে পরবাসী তারা এখন নিজের জীবনকে বোঝা ভেবে চরম অনিশ্চয়তায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

কী হচ্ছে মংডুতে?

মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিনটি স্থাপনায় গত ৯ অক্টোবর একদল সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ৯ জন বিজিপি সদস্যকে হত্যা এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নেয়। মিয়ানমার সরকার এই ঘটনার জন্য রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনকে (আরএসও) সন্দেহ করে। এই ঘটনার প্রায় এক মাস পর ১০ নভেম্বর থেকে অপারেশন শুরু করে সেই দেশের সরকার।

মূলত আরএসও দমনের নামে শুরু করা অভিযানেই হত্যাযজ্ঞ শুরু করে সেই দেশের সরকারি বাহিনী। তাণ্ডবের শিকার ও তিন দিন আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মোহাম্মদ আলী, আয়েশা খাতুন, রমিজা খাতুন ও হোসেন আলী কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, বাগী খোঁজার নামে তারা পাড়ার পর পাড়া পুড়িয়ে দিচ্ছে (বাগী বলতে বিদ্রোহী বোঝানো হয়, আরএসও সদস্যদের বিদ্রোহী আখ্যায়িত করেছে সেই দেশের নিরাপত্তাবাহিনী)। তাঁরা জানান, ভয়াবহ নির্যাতন শুরু হয়েছে সেখানে। শুরুতে ঘরে ঘরে তল্লাশি হয়। ভাতের চাল পেলে বলে বাগীদের (বিদ্রোহী) খাওয়ানোর জন্য চালগুলো ঘরে রেখেছ। এ কথা বলেই নির্যাতন। আবার চাল না পেলে বলে, তোমরা তোমাদের চাল বাগীদের খাইয়েছ, তাদের ভাত দিয়েছ। পানি দিয়েছ। আশ্রয় দিয়েছ। এই অজুহাতে তারা ঘর পোড়াচ্ছে। মানুষ মারছে। যুবকদের গুলি করছে। তরুণীদের ধর্ষণ করছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসাদের মধ্যে ধর্ষিতা কয়েকজনও আছে বলে তাঁরা জানালেন। তাঁরা জানালেন বর্বরতা শুরুর আগে সেখানে কর্মরত এনজিও কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়। বাইরে থেকে যাতে কেউ ওই সব এলাকায় ঢুকতে না পারে সে জন্যও নজরদাড়ি বাড়ানো হয়।

অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে কথা হয় উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে। ওই ক্যাম্পের লোকজন জানায়, বিদ্রোহী খোঁজার নামে মূলত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিধন করছে সেই দেশের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। ঘর পোড়ানোর সময় শিশুদের আগুনে নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। শিশুরা পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে।

কিভাবে অনুপ্রবেশ

অনুপ্রবেশকারীরা জানায়, তারা মিয়ানমারের দালাল ও বাংলাদেশের দালালদের মাধ্যমে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে জাদিমুড়া, দমদমিয়া, লেদা, নাইক্ষ্যংখালী, উনছিপ্রাং, ঝিমংখালী, মিনাবাজার, কাঞ্জরপাড়া, লম্বাবিল, বালুখালীর বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে। এসব পয়েন্ট দিয়ে নৌকাযোগে আসা রোহিঙ্গারা তীরে উঠছে এবং বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করছে। অনেকেই আবার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আশ্রয় নিচ্ছে।

অনুপ্রবেশকারীরা জানিয়েছে, তারা রাতের অন্ধকারে সেই দেশের দালালদের মাছপিছু ২০-৫০ হাজার কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) দিয়ে নৌকায় ওঠার সুযোগ পায়। আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নামতে এই দেশের দালালরা নিচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকা। মূলত নির্যাতিত, নিজভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া, পালিয়ে বাচার চেষ্টাকারীদের নিয়েই একধরনের ‘বাণিজ্য’ শুরু করেছে দালালরা।

কারা টাকা নিচ্ছে, কী বলে নিচ্ছে জানতে চাইলে অনুপ্রবেশকারী আলী হোসেন বলেন, ‘অ্যাঁরা বিপদত পরগ্গ্যি, যারা টেয়্যা চাইয়ে, তারারে দিই। পরিচয় জানিবারলাই ন চাই।’ (আমরা বিপদে পড়েছি। যারা টাকা চেয়ে তাদের টাকা দিয়েছি। পরিচয় জানার চেষ্টা করিনি।)

তারা জানায়, নাফ নদ থেকে উঠে অটোরিকশা ভাড়া করে তারা কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছেছে। এখানে আসার পর অন্য রোহিঙ্গারা তাদের আশ্রয় দিয়েছে। অনুপ্রবেশকারী আয়েশা খাতুন জানান, তিনি এক শিশুসন্তানকে রেখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তাঁর সন্তান জীবিত আছে কি না তিনি জানেন না।

অনুপ্রবেশকারীরা জানায়, নভেম্বরের শুরুতে হেলিকপ্টার দিয়ে অভিযান শুরু হয়। তারা জানায়, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়। বিস্ফোরক ছিটিয়ে ফেলা হয়। গুলিতে সেই বিস্ফোরকে আগুন ধরে এলাকার পর এলাকা ছাই হয়ে গেছে। বর্বতার শিকার হয়ে যারা নিজ ভিটা ছেড়েছে তাদের অন্য এলাকায়ও ঢোকার সুযোগ নেই নানা প্রতিরোধে। অন্য এলাকায় গিয়ে ধরা পড়লে নতুন করে নির্যাতনের ভয়। এরপর থেকেই মূলত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ চেষ্টার শুরু। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে এটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। গ্রামে গ্রামে আগুন দিয়ে পাড়ার পর পাড়া পুড়িয়ে দেওয়ার পরই মানুষের ঢল নামে বাংলাদেশমুখী।

তিন কারণে সহজ অনুপ্রবেশ

রোহিঙ্গারা তিনটি সুযোগ লাগিয়ে বাংলাদেশে সহজে অনুপ্রবেশ করছে। রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে। অনুপ্রবেশে টাকা লাগছে। তারা কিভাবে টাকা জোগাড় করছে জানতে চাইলে অনুপ্রবেশকারীদের কয়েকজন কালের কণ্ঠকে জানায়, কারো কারো পরিবারের সদস্যরা মালয়েশিয়া এবং সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। মংডুতে জন্মভিটায় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আগুন দেওয়া, নির্যাতন এবং দমন-পীড়নের খবর পেয়ে স্বজনরা নানাভাবে তাদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে, টাকা পাঠাচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে জানা গেছে, টেকনাফ ও উখিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা এবং আগে থেকে বাংলাদেশে আসা বৈধ-অবৈধ রোহিঙ্গারা নির্যাতিত মানুষগুলোকে বাঁচানো নিজেদের দায়িত্ব মনে করছে। এই কারণে এক ধরনের মানবিক জায়গা থেকে তারাও এগিয়ে গেছে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে। তৃতীয়ত, আত্মীয়তার সূত্রগুলো এখন প্রবলভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশে বৈধ-অবৈধভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা যখন জানতে পারছে, তাদের জন্মভিটায় রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়ন করা হচ্ছে, তখন তাদের বাংলাদেশে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং এই দেশে এনে আশ্রয় দিচ্ছে।

এই বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সফিউল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, মানবিক কারণ এবং আত্মীয়তার বন্ধনের কারণে কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পেরেছে। এখনো চেষ্টা চালাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কারণে অনুপ্রবেশের ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। বেশির ভাগ অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো হয়েছে কিংবা নদী থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া অসম্ভব। অতীতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছে।’

অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা হচ্ছে

টেকনাফের লেদা ও উখিয়ার কুতুপালং এলাকার অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ পর্যন্ত যেসব অনুপ্রবেশকারী আশ্রয় নিয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা তৈরির বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন লেদা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ডা. দুদু মিয়া। তিনি বলেন, এই ক্যাম্পে মোট ছয়টি ব্লক আছে। এর মধ্যে একটি ব্লকের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকায় এ ব্লকে ১৯২ জন, বি ব্লকে ২৪৫ জন, ডি ব্লকে ১৪৫, ই ব্লকে ১০০ জনের নাম মিলেছে। বাকি দুই ব্লকের তালিকা শুক্রবারের মধ্যে শেষ হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, শুধু এই ক্যাম্পে হাজারখানেক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, অন্য ক্যাম্পগুলোতেও অনুপ্রবেশকারীরা আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে কিছু এনজিও সংস্থা কাজ করছে। কয়েক দিনের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত হতে পারে।

ফেরত যাচ্ছে ৮-১০টি নৌকাবোঝাই রোহিঙ্গা

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য গত বুধবার রাতে নাফ নদ পেরিয়ে কিংবা নদে ৮-১০টি নৌকাবোঝাই রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেয়নি বিজিবি। এসব রোহিঙ্গাকে বৃহস্পতিবার রাতেই ফিরিয়ে দেওয়ার কথা। এ তথ্য জানান বিজিবি ব্যাটালিয়ন-২এর উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী। কালের কণ্ঠের প্রশ্নের জবাবে তিনি বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘৮-১০টি নৌকায় রোহিঙ্গারা নাফ নদে অবস্থান করছিল। কিন্তু বিজিবি এসব নৌকাকে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশের সুযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে। তাই যেকোনো মুহূর্তে নৌকাগুলো ফেরত পাঠানো হবে।’

বেড়েছে নিরাপত্তা, কমেছে অনুপ্রবেশ

কী পরিমাণ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে এমন হিসাব পায়নি বিজিবি। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও কোস্ট গার্ড নাফ নদ থেকেই ফিরিয়ে দিয়েছে অন্তত আট শতাধিক ব্যক্তিকে। এর পরও কয়েক হাজার লোক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। রাতের অন্ধকারে অনুপ্রবেশের ঘটনা কালের কণ্ঠসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিজিবি, কোস্ট গার্ড, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ কঠোর অবস্থান নেয়। এ কারণে বুধবার থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার টেকনাফ এসেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। তিনি সৈনিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

সাত দালালের শাস্তি

গতকাল টেকনাফ নাইটং পাড়া, নাইক্ষ্যংখালী, দমদমিয়া ও মোচনী পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা মোট সাতজনকে আটক করেন। তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সফিউল আলম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) তুষার আহমেদ পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে সাতজনের মধ্যে চারজনকে এক মাস ও ও তিনজনকে দুই মাস করে কারাদণ্ড দেন। দুই মাস কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো সফিউল্লাহ, শামসুল আলম ও সেকান্দর বাদশা। এক মাস করে কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলো মোহাম্মদ আলম, মোহাম্মদ জোবায়ের, মোহাম্মদ ইদ্রিস ও মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন। কারাদণ্ডের পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

দালাল তালিকা

টেকনাফ থানায় আগে থেকেই মানবপাচারকারী এবং ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পৃথক তালিকা রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের সহযোগিতা করে—এমন কোনো তালিকা তৈরি ছিল না। টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দালালদের একটি তালিকা তৈরি হচ্ছে। এই তালিকায় দালালের সংখ্যা ৫০ জন হতে পারে। এদের মধ্যে ১২-১৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিকও থাকবে। বাকিরা বাংলাদেশি নাগরিক।’ তিনি বলেন, ‘তালিকাটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে কাজ চলছে।’ তালিকাভুক্ত মানবপাচারকারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত মানবপাচারকারীরা এখন এলাকাছাড়া। মানবপাচাকারী ও রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা দেওয়ার ধরন এক নয়। মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যারা মানবপাচার করেছে, তাদের তালিকা আলাদাভাবে আছে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই গ্রেপ্তার হয়েছে বা পলাতক। আবার রোহিঙ্গাদের এ দেশে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি ভিন্ন। তারা কিছু টাকার বিনিময়ে নৌকায় করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়ে এসে লুকিয়ে থাকার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এই তালিকা তৈরি হচ্ছে এবং তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে।

প্রশাসনের জরুরি মিটিং ও জুমার নামাজে তদারকি

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সফিউল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মংডুতে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সেই লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে এক জরুরি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর হ্নীলা এলাকায় গিয়ে আমি নিচেই জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছি। এ ছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজের পর যাতে কোনো ধরনের নাশকতা, মিটিং-মিছিল না হয়, সেই লক্ষ্যে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’ একই বিষয়ে টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মংডুর সহিংসতার জেরে যদি টেকনাফে কেউ নাশকতা করার চেষ্টা করে, তবে তারা কোনো অবস্থাতেই রক্ষা পাবে না। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই লক্ষ্যে বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ এদিকে বিজিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, টেকনাফ এলাকায় বিজিবি সদস্যসংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

Comment here