কক্সবাজারজাতীয়

দূনীর্তি মামলার রায় ঘোষনার দিন আজ : এমপি বদির কাছে দুদকের হার !

টেকনাফ ভিশন ডেস্ক :2220140320192008 এমপি বদির বিরুদ্ধে  দায়েরকৃত দূদকের মামলার রায় ঘোষনার দিন আজ।   দূনীর্তির মামলায় উখিয়া টেকনাফের এমপি আব্দুর রহমান বদির কাছে হেরে যাবেই এমনটি মনে করেন স্থানীয় জনসাধারন। নিবাচর্নী আসনের ভোটারদের মনে এমন ধারনা। কারন আব্দুর রহমান বদির এখনো জয় রয়েছে। কিভাবে মামলা মোকাবেলা করতে হয় তা তাঁর জানা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ সাংসদের বিরুদ্ধে প্রায় ২২ টি মামলা হয়েছিলো। সব মামলই তিনি খালাস পান বা রাজনৈতিক মামলা হিসেবে অব্যাহতি পান। এসব ধারনা থেকে এলাকাবাসী মনে করেন সাংসদ আব্দুর রহমান খালাস পাবেন। দূনীতি দমন কমিশন (দূদক) হারবে এ মামলায়। এ প্রসংগে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ সভাপতি জহির হোসেন বলেন, অত্যান্ত জনপ্রিয় এ সাংসদ এলাকায় দানবীর হিসেবে পরিচিত । তার বিরুদ্ধে আবার দূনীতি মামলায় সাজা হবে তা কেউ কামনা করে না। তিনি এ মামলা থেকে মুক্ত হয়ে এলাকায় “রাজা” বেশে ফিরে আসবেন বলেও দাবী করেন।

তথ্য অনুযায়ী, জীবনে প্রথম সংসদ সদস্য হওয়ার পর পাঁচ বছরে তার আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। আর নিট সম্পদ বেড়েছে ১৯ গুণের বেশি। অভিযোগ রয়েছে, হলফনামায় বদি কেবল আয়কর বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থ ও সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি গত পাঁচ বছরে আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও টেকনাফে জ্বালানি তেলের ব্যবসা করে এ টাকা অর্জন করেছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তিনি। হলফনামা অনুসারে এমপি বদির বার্ষিক আয় ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা।
২০০৮ সালের হলফনামায় চিত্র:
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেয়া হলফনামায় বদি বলেছেন, তখন তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা। আর ব্যয় ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা। তখন (২০০৮) বিভিন্ন ব্যাংকে তার মোট জমা ও সঞ্চয়ী আমানত ছিল ৯১ হাজার ৯৮ টাকা। পাঁচ বছরের মাথায় এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার ২৩৭ টাকা। তার হাতে ২০০৮ সালের নভেম্বরে নগদ টাকা ছিল দুই লাখ সাত হাজার ৪৮ টাকা। আর এখন ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া এখন স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ২৬৫ টাকা।
আয়কর বিবরণীতে তিনি দেখিয়েছেন, সাত কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৮ টাকা। আর নিট সম্পদের পরিমাণ বলা হয়েছে নয় কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৩ টাকা। পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালের আয়কর বিবরণী অনুসারে, তখন তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৮৮০ টাকা। আর নিট সম্পদ ছিল ৪৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৩ টাকার।
এসব বিবেচনায় বদির অবৈধ সম্পদ অর্জন ও আয়কর প্রদানে তথ্য গোপনে যাচাই করতে দুদকের উপ-পরিচালক আহসান আলীর নেতৃত্বে একটি দল ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে সরেজমিন তদন্তে কক্সবাজারে আসেন। এর আগে ১২ জানুয়ারি বদির অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। এ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই স্ত্রীসহ বদির সমস্ত আয়কর নথিও জব্দ করা হয়। অনেক তথ্যানুসন্ধানের পর ২০১৪ সালের ২১ আগস্ট দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সোবহান বদির বিরুদ্ধে মামলা করেন। অবশ্য সাংসদ বদি পরে এ মামলায় জামিন নিয়ে আইনী ভাবে মামলা মোকাবেলা করে আসছেন।
এদিকে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলে কাজ করে চলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে পরিসংখ্যান মতে কুলিয়ে উঠতে পারছে না সংস্থাটি। গত ২৪ অক্টোবর সোমবার দুদক প্রকাশিত ২০১৫ সালের ‘বার্ষিক প্রতিবেদন’ অনুযায়ী, ওই বছর কমিশনের দায়ের করা ৩০৬টি মামলা বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হয়। এর মধ্যে ২০৭টি মামলায় আসামিরা খালাস পান অর্থাৎ হেরেছে দুদক। অন্যদিকে ৯৯টি মামলায় সাজা হয় আসামিদের। হিসাব অনুযায়ী, দুদক গত বছর প্রায় ৬৮ শতাংশ মামলায় হেরেছে এবং ৩২ শতাংশে জয়ী হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রোপট ও পরিচিতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, গণশুনানি, প্রাতিষ্ঠানিক সমতা বৃদ্ধি, কমিশনের তথ্য ব্যবস্থাপনা, আগামী অভিযাত্রায় কমিশনের কর্মপরিকল্পনা ও সুপারিশমালাসহ আটটি অধ্যায় রয়েছে।

ওই দিন বিকাল ৩টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে দুদকের ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের এক প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রতিবেদন পেশ করে বলে জানান সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেনÑ কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ, এএফএম আমিনুল ইসলাম ও সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল। উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশন, ২০০৪-এর ২৯ (১) ধারা অনুযায়ী, প্রতিবছর পূর্ববর্তী বছরের সম্পাদিত কার্যাবলি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই ধারা অনুযায়ীই প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল
বলেন, বিভিন্ন কারণে দুদক বেশির ভাগ মামলায় হেরেছে। কী কারণে দুদক মামলায় হারছে, সেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করেছি। আমাদের চেষ্টায় যেখানে-যেখানে ঘাটতি ছিল, সে পয়েন্টগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মামলাগুলোয় সাজার হার বেড়েছে; ৩৭ শতাংশ থেকে ৪৯.২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আমরা মামলার সাজার হার বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন আছি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালে মোট ১০ হাজার ৪১৫টি দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। যাচাই-বাছাই শেষে ১ হাজার ২৪০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। একই সময়ে বিচারিক আদালতে কমিশন আমলের ৩ হাজার ৯৭টি এবং ব্যুরো আমলের ১ হাজার ৮০টিসহ মোট ৪ হাজার ১৭৭টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এসব মামলার মধ্যে বিচারকার্য চলমান ছিল ৩ হাজার ৩৫৭টি। বাকি ৮২০টি মামলা স্থগিত ছিল। গত বছর কমিশন আমলের ১৮৮টি এবং ব্যুরো আমলের ১১৮টিসহ মোট ৩০৬টি মামলার বিচারকার্য নিষ্পত্তি করা হয়। নিষ্পত্তিকৃত মামলাগুলোর মধ্যে ২০৭টি মামলার আসামিরা খালাস এবং ৯৯টি মামলার আসামিরা সাজা পেয়েছেন। অর্থাৎ ২০১৫ সালে ৬৮ শতাংশ মামলায় আসামিরা খালাস এবং ৩২ শতাংশ মামলায় সাজা পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে দুদকের মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫৮ জন আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ জন আইনজীবীকে কমিশন আপিল বিভাগে ‘অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড’ হিসেবে নিযুক্ত করেছে। দুদকের মামলা পরিচালনা করতে ঢাকার ১৩টি বিশেষ জজ আদালতে ১৩ জন আইনজীবী দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিভাগে ৬০, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ৫০, খুলনা বিভাগে ২৬, বরিশাল বিভাগে ১৯ ও সিলেট বিভাগে ১৯ জন আইনজীবী নিযুক্ত করা আছে।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ব্যুরো আমলের মামলাগুলোতে দুদক বেশি হারছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হওয়া, সাক্ষী খুঁজে না পাওয়া ও নথিপত্র নষ্ট হওয়ার কারণে হারই বেশি হয়। মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি, তদন্তে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি, দুর্বল অভিযোগপত্র দাখিল, বিচারকার্যে ধীরগতি, আইনের ফাঁকফোকর থাকায় দুর্নীতির মামলায় বেশির ভাগ আসামি খালাস পেয়ে যান।

Comment here