এক্সক্লুসিভকক্সবাজারজাতীয়সারাদেশ

কক্সবাজার আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার::
সদ্য সমাপ্ত কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী মোজাম্মেল পরিবারে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে চাচাতো-জেঠাতো ভাইদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন জেঠাতো ভাই সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল।

স্ট্যাটাসের পক্ষে-বিপক্ষে নানান মন্তব্য করছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এই গৃহদাহ বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা এই গৃহবিবাদ জটিল আকার ধারণ করার আগে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা গেছে, গত ২৪শে মার্চ কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজিবুল ইসলাম সভাপতি ও উজ্জল কর পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর একেএম মোজাম্মেল হকের কনিষ্ঠ ছেলে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল।

কক্সবাজারের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মোজাম্মেল পরিবারের প্রভাব সর্বজন স্বীকৃত। মোজাম্মেল হকের মৃত্যুর পর স্মরণসভায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। এ জন্য কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এ পরিবারের গুরুত্ব অসীম মনে করেন সবাই।

এ জন্য জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো তাদের পরিবারের দখলেই দেখা যায়। মোজাম্মেল হকের বড় ছেলে মাসেদুল হক রাসেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মেজ ছেলে শহীদুল হক সোহেল জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, একমাত্র মেয়ে তাহমিনা চৌধুরী লুনা জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য। ছোট ছেলে কায়সারুল হক জুয়েল জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

অপর ছেলে শাহীনুল হক মার্শাল ক্রীড়া সংগঠকসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের অধিকাংশই এ পরিবারের আশীর্বাদপুষ্ট। একেএম মোজাম্মেল হকের মৃত্যুর পর তার ভাইপো মুজিবুর রহমান জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেন। একসময় নানা কারণে মোজাম্মেল হকের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মুজিবুর রহমানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে কক্সবাজার পৌর মেয়র নির্বাচনে জামায়াতসমর্থিত প্রার্থী সরওয়ার কামালের কাছে প্রথম বার হেরে যান মুজিবুর রহমান।

পরবর্তীতে আত্মীয়স্বজন ও পরিবারকেন্দ্রিক সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে অন্তর্কলহ ভুলে সবাই এক কাতারে শামিল হন। মোজাম্মেল-মুজিব পরিবারের ঐক্যবদ্ধ পথচলার কয়েকবছর যেতে না যেতেই পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আবারো শুরু হয়েছে গৃহবিবাদ।

সূত্রমতে, মুজিবুর রহমান কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। পরিবারের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় পৌরসভার মেয়রও নির্বাচিত হন মুজিবুর রহমান।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পর মুজিবুর রহমান পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ ছেড়ে দিলে পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান নজিবুল ইসলাম। কক্সবাজার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নজিবুল ইসলাম ও উজ্জল করের নেতৃত্বাধীন পৌর আওয়ামী লীগের এ কমিটি মুজিবুর রহমানের অনুগত কমিটি হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৯ বছর পর গত ২৪শে মার্চ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে মুজিবুর রহমানের জেঠাতো ভাই (মোজাম্মেল হকের কনিষ্ঠ সন্তান) কায়সারুল হক জুয়েল নজিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে সভাপতি প্রার্থী হলে বেকায়দায় পড়ে যান মুজিবুর রহমান।

শেষমেশ ওই সম্মেলনে মুজিবুর রহমানের অনুগত নজিবুল ইসলাম সভাপতি ও উজ্জল কর পুনরায় সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হলে মুজিবুর রহমানের ওপর ক্ষুব্ধ হন মোজাম্মেল পরিবার। তাদের দাবি, মুজিবুর রহমানের রাজনীতির ফাউন্ডেশন হলেন তাদের প্রয়াত পিতা একেএম মোজাম্মেল হক। তাদের পরিবারের ইমেজের উপর ভর করে নেতা হয়েছেন মুজিবুর রহমান। অথচ মোজাম্মেল পরিবারের যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

তিনি আমাদের ডুবানোর জন্য যাবতীয় কলকাঠি নাড়েন। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েল বলেন, কক্সবাজারের আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে মুজিবুর রহমান। লুটপাট ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তিনি।

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফুফাতো ভাই, খুরুস্কুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাহান ছিদ্দিকীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো প্রার্থী তালিকায় ১ নাম্বারে দেয়ার কথা বলে খোদ তার কাছ থেকেই ৫ লাখ টাকা নেন। অথচ আরও বেশি টাকা নিয়ে এক নাম্বারে নাম পাঠিয়েছেন অন্য এক প্রার্থীর নাম। তার দাবি, জঞ্জালে ভরে গেছে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ। মাফিয়া ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে প্রাণের এ সংগঠন। যার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। নীতিবান মানুষরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আওয়ামী লীগকে মাফিয়া ও লুটেরাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এ অবস্থার অবসান হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তবে এসব ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বরাবরই বলে আসছেন, তিনি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না। আর গঠনতান্ত্রিক নিয়মেই সংগঠন পরিচালনা করেন। এ জন্যই ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন তিনি।

তবে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারে তিনি বিচলিত নন জানিয়ে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনিই তার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন।

উখিয়া নিউজ ডটকম

Comment here