এক্সক্লুসিভটেকনাফসারাদেশ

আব্বুর সাথে আমাদের সম্পর্কটা শ্রদ্ধা, ভালবাসা আর শাসনের

আব্বুর সাথে আমাদের সম্পর্কটা শ্রদ্ধা,ভালবাসা আর শাসনের হলেও আমাদের কোন বিষয় গোপন ছিল না, কারণ আমরা প্রতিদিন দুইবেলা ভাত একসাথে খেতাম।বিশেষ কোন দাওয়াত বা হ্নীলার বাহিরে থাকলে সেটা অন্য কথা।
প্রতিদিন আব্বুর সাথে আমাদের বিভিন্ন ব্যাপারে কথা হতো।

বড় ভাই আব্বুর সামনে খুব কম কথা বলতেন বিশেষ করে আব্বু যা-কিছু জিজ্ঞেস করতেন বা জানতে চাইতেন সেগুলোর উত্তর দিতেন,যেইটা করার জন্য নির্দেশ দিতেন সেটাই করতেন,কোনদিন দেখিনি বড়ভাই আব্বুকে কোন বিষয় নিয়ে অনুরোধ করতে বা কারো পক্ষে কথা বলতে।
মেজভাইয়ের প্রতিটি কথায় ছিল হ্নীলার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের,বরাদ্দের,আব্বু সবসময় দিকনির্দেশনা দিতেন বিভিন্ন ওয়ার্ড ভিত্তিক মানুষের নাম বলতেন আরো অনেক কিছু।।
‌আমি হয়তো আব্বুর কাছে বেশি আবদার করতাম,বেশি অনুরোধ করতাম আর বেশি কথা বলতাম।আব্বু আমাকেও সবসময় রাজনৈতিক,সামাজিক সহ চলমান বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেন,মাঝেমধ্যে কোন নিউজ নিজেই পড়ে শুনাতাম।একটা ব্যাপারে আব্বু খুব কষ্ট পেতেন যখন কোন রাজনৈতিক সহযুদ্ধা বা পরিচিত কারো মৃত্যুর খবর শুনতেন,মনখারাপ করতেন অনেক।বিশেষ করে করোনা কালে কক্সবাজারের নজরুল ইসলাম চাচা ও জহিরুল ইসলাম চাচার মৃত্যুর খবরটা আব্বুর মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল।কিছুক্ষণ পরপর জিজ্ঞাসা করতেন জানাজা কখন,কোথায়?উনাদের জন্য শোকবার্তা দিছি নাকি ইত্যাদি।

শেষ বয়সে এসেও আব্বু সবসময় বঞ্চিত অসহায় মানুষের পাশে থাকতেন,কেউ বিচার নিয়ে অভিযোগ করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতেন,কেউ যদি চালের কার্ড বা পরিষদ থেকে কিছু পাইনি বলেন তাহলে তো সচিব ফরিদ আর মেজভাইয়ের ঘুম হারাম করে দিতেন।
আব্বুর দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক জীবনে কেমন ছিলেন,সাহসিকতা,উদারতা,প্রতিবাদী,ন্যায় বিচারক,সততা ইত্যাদি আমার নতুন করে বলার কিছু নাই আপনারা কমবেশি সবাই জানেন।
আমি শুধু একটি কথা বলবো,,২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনের দুইদিন আগে আব্বুকে বললাম আমরা হেরে যাবো!!ঠিক তখনি আব্বু বললেন

“বীর কখনো পরাজয়ে ভয় পাই না” সেই থেকে কথাটি আমার মনে এখনো কম্পন তুলে।
দুইমাস আগে আব্বু অসুস্থ ছিলেন ঢাকা এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন,আব্বুকে দেখে অনেকে খুশিতে বলতেন স্যার আল্লাহ রহমতে একদম সুস্থ,আগের চেয়ে অনেক শক্ত হয়ে গেছেন।আব্বুর সবকিছু স্বাভাবিক দেখে আমরাও অনেক অনেক খুশি ছিলাম।
সুস্থ হবার পর কেউ ফোন করলে বা সরাসরি কথা বললে আব্বু সবসময় বলতেন আল্লাহ রহমত আর মানুষের দোয়া ছিল তাই আমি সুস্থ হয়ে গেছি।প্রতিনিয়ত যেকোনো কিছুতে আব্বুর মৃত্যুর কথা স্বরণ করতেন,কিছুদিন আগে টেকনাফ সদর ও সাবরাং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন,সেইদিনও আব্বু বললেন, চাইলে আমি কমিটি অনুমোদন না দিয়ে রেখে দিতে পারতাম কিন্তু হায়াত-মউতের বিশ্বাস নাই!হয়তো একটা কথা থেকে যাবে,স্যার আমাদের কমিটি অনুমোদন দেইনি।
সুস্থ হয়ে আসার পর বড়ভাইকে ডেকে বললেন দরগা কবরস্থানে জানাজার নামাজ পড়ার স্থান টা সিমেন্ট দিয়ে ভালভাবে প্লাস্টার(ঢালাই) করে দেওয়ার জন্য আর পাম্পের পিছনের জায়গায়টা একটা মসজিদ করার জন্য দান করে দিতে।বড়ভাই তাই করলেন।

আব্বু সকাল আর বিকেলে পেট্রোল পাম্পে যেতেন বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলতেন আমরা কখনো আব্বুকে গাড়ি ছাড়া যাওয়া আসা করতে দিতাম না, তারপরেও আব্বু প্রায় সময় হেটে আসতে চাইতেন,বলতেন হেটে গেলে আমার ভাল লাগে।
১২.১১.২০২০ প্রতিদিনের মত সন্ধ্যায় আব্বু পাম্পে বসেছিলেন অনেক মানুষকে ফোনে কল দিছেন যেটা আমরা পরে জেনেছি আব্বু বিভিন্ন জনকে কল দিয়ে শুধু বলেছেন “কি খবর,তুমি কোথায়,হ্নীলা আসিও আমার সাথে দেখা করিও” খলিল স্যার কে ফোন দিয়ে পাম্পে আনলেন জানি কি কথা হয়েছিল!!
তখন আমি বড় ভাই সহ ৭/৮ জন পাম্পের বাহিরে দাড়িয়ে কথা বলতেছিলাম কথার ফাকে রফিক আংকেল বললো দাদা এখন একদম সুস্থ।
বড ভাই বললেন আল্লাহ রহমতে আব্বু আরো অনেক বছর বেঁচে থাকবেন আর বললেন ডিসেম্বরে বাহারছড়ার পেট্রোল পাম্প উদ্ভোধন করে আব্বুর জন্য নিউ মডেল একটা গাড়ি কিনবো,হয়তো বড়ভাইয়ের আশাটি আর পূরণ হবে না!

সবসময় রাত ৯.৩০ এর মধ্যে আমরা সবাই বাড়ি চলে আসতাম সেদিনও ব্যাতিক্রম ছিল না।রাতে একসাথে খেলাম তারপর ড্রইংরুমে বসে আব্বু ফ্রুটস খেলেন প্রায় রাত ১১ টা পর্যন্ত একসাথে ছিলাম তারপর আব্বু রুমে চলে গেলে ঘুমানোর জন্য,আমরাও যার যার রুমে চলে আসি। হঠাৎ রাত ১২.৩০ সময় আম্মু ডাকলেন আমি গেলাম ভাইয়ারা আসলো আব্বু বললেন খারাপ লাগতেছে একটু কেনোফিতে বসবেন তারপর সেখানে বসে একটু বমি করলেন আমরা আব্বুকে রুমে আনলাম,ওয়াস রুমে নিয়ে গেলাম তারপর প্রেসার চেক করতে দেখলাম প্রেসার লো আব্বুর প্রেসার কখনো লো হয়নি।মেজ ভাই এম্বুলেন্স আনার জন্য কল দিলেন,আমি বাইক নিয়ে
জুবাইর মামা (ড্রাইভার) কে নিয়ে আসলাম তারপর আব্বুকে গাড়িতে তোলে পাশের আইওএম হাসপাতালে নিয়ে গেলাম সেখানে অক্সিজেন চেক করে অক্সিজেন সাপোর্ট দিলেন তখন অক্সিজেন লেভেল ৪০ নেমে আসলো। উনারা বললেন আইসিও সাপোর্ট লাগবে তাই তাড়াতাড়ি কক্সবাজার নিয়ে যাওয়ার জন্য এম্বুলেন্সে ওঠালাম সাথে উনাদের দুইজন স্বাস্থ্য কর্মী ছিলেন।এম্বুলেন্স নিয়ে যখন আমাদের পাম্পে পৌছালাম তখন সময় প্রায় রাত ২.২০ মি,বড়ভাই বললেন তুমি বাড়িতে থাকো আমরা যাচ্ছি বলে আম্মু,মেজভাই,বড়ভাই সাথে আরো কয়েকজন সহ দুইটা গাড়ি নিয়ে এম্বুলেন্সের সাথে রওনা দিলেন।।
আমি বাড়িতে চলে আসছি,কিন্তু মনটা অস্থির হয়ে ছিল একটু পরপর ফোন দিচ্ছিলাম।।
বাহারছড়া পৌছানোর আগে ইমরান বললো স্যারের পালস কমে যাচ্ছে দোয়া করবেন।তখনো বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে!!

কিছুক্ষণ পর আবার মিজান কে কল দিলাম তখন সময় ৩.৫৫ মি ফোন রিসিভ করে সে কান্না করে একটা কথা বললো ভাইয়া স্যার বেঁচে নেই।।
মাত্র কয়েকটি ঘন্টার মধ্যে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সবকিছু!কালবৈশাখীর তান্ডবের মত চুরমার করে দিয়েছে আমাদের সাজানো বাগান,এই কেমন নিষ্ঠুরতার!
একটু যদি অসুস্থ থাকতো বা কোন কিছু নিয়ে টেনশন করতো তাহলে মন কে শান্তনা দিতে পারতাম কিন্তু তেমন কিছুই তো ছিলনা।
আব্বু গত ১৩/১১/২০২০ শুক্রবার আমাদের সবাই কে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।।
আব্বুর জন্য দোয়া করবেন,পথচলায় কোন ভুল থাকলে ক্ষমা করে দিবেন।পিতা হারানোর বেদনা কি সেটা এখন বুঝতেছি,অনেকে শান্তনা দিচ্ছে কিন্তু হাজার হাজার শান্তনার বিনিময়ে যদি একবার আব্বু ডাক শুনতাম তাহলে মনকে বুঝাতে পারতাম।
“আব্বু,তোমাক ছাড়া কিভাবে দিন কাটাচ্ছি সেটা বুঝাতে পারবো না,সময়গুলো যেন পার হচ্ছে না,এখনো বিশ্বাস হয় না তুমি আমাদের মাঝে নেই,তোমার শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারবে না”
“ভাল থেকো আব্বু,
অনেক বেশি মন খারাপ হলে,তোমাকে অনেক বেশি মিস করলে আমিও চলে আসবো তোমার কাছে”

তারেক মাহমুদ রনির টাইমলাইন থেকে

Comment here