ক্রাইম

অপর একটি ডাকাত গ্রæপ হাতিয়ে নিয়েছে ৩০ লাখ টাকা ! রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ সহযোগিসহ আটক


টেকনাফ প্রতিনিধি :

জনতার হাতে অবশেষে ধরা পড়লো টেকনাফের শালবাহান কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নূও মোহাম্মদ ওরফে নুর মোহাম্মদ ডাকাত। ৩১ আগস্ট শনিবার দুপুরে টেকনাফের রঙ্গিখালী উলুচামরী পাহাড়ী এলাকায় সহযোগী অপর রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আমান উল্লাহসহ ধরা পরে। পরে জনতা তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
আটক নুর মোহাম্মদ জাদিমোড়া জুম্মা পাড়া ২৭ নং শিবিরে এলাকায় বসবাস করে আসছিলো। তার পিতার নাম কালা মিয়া। ১৯৯১ সালের পড়ে নুর মোহাম্মদ মিয়ানমার হতে পালিয়ে এসে হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমোড়া এলাকায় বসবাস শুরু করে। পরে এখানে বেশ কয়েকটি বিয়ে করে নিজের অবস্থান শক্তিশালী ও স্বশস্ত্র গ্রæপ তৈরী করে ইয়াবা পাচার, হত্যা গুমসহ নানা অপরাধ সংগঠিত করে যাচ্ছিলো। তার অপর সহযোগি আমান উল্লাহ টেকনাফ নয়া পাড়া নিবন্ধিত শরনার্থী শিবিরের বি বøকের সেড নং ৭৪৯ এর ৪ নং কক্ষের বাসিন্দা। তার পিতার নাম মো: শফি প্রকাশ কালা ডাক্তার। এরা রঙ্গিখালী এলাকায় ভোলাইয়া বদ্যৈ গ্রূপের সদস্যদের হাতে আগে ধরা পরে । এরা পুলিশে না দেওয়ার শর্তে নুর মোহাম্মদ ডাকাত হতে ৩০ লাখ টাকা আদায় করে। পরে নুর মোহাম্মদকে সহযোগিসহ পুলিশের হাতে তুলে দেয় বলে স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে। এ বিষয়ে হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘এ ধরনের বিষয়টি আমারও কানে এসেছে। তবে পরে খোজঁখবর নিতে হবে।”
গত ২২ আগষ্ট রাতে স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি উমর ফারুক খুন হওয়ায় ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরপর এলাকাবাসী রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও ভাংচুর চালায়। প্রধান সড়ক অবরোধ করে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচল প্রতিহত করতে থাকে। এদিকে এ ঘটনার জের ধরে ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে বন্দুক যুদ্ধে তিন জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মারা যায়। যারা কি না যুবলীগ নেতি হত্যার আসামী। এ মামলার প্রধান আসামী হচ্ছে আটক নুর মোহাম্মদ। যুবলীগ হত্যাকান্ডের পর আইনশৃংখলা বাহিনীও রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী ধমনে তৎপর হয়ে উঠে। এতে সন্ত্রাসীরা শিবির হতে পালিয়ে পাহাড়ে অবস্থান নেয়। এদিকে দু জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আটকের কথা জানান করেছে টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাস।

কে সেই নুর মোহাম্মদ !
গত ২২ আগস্ট ছিলো নুর মোহাম্মদেও মেয়ের কর্নছেদন অনুষ্ঠান। জাদিমোড়ার পাহাড়ী এলাকায় জনৈক মেহের আলীর বাগান বাড়ীতে তৈরী করা হয় আয়োজন। দুটি গরু জবাই করে কক্সবাজার হতে গানের শিল্পী এনে মহাধুমধামের সাথে দিনে রাতে চলে জমকালো আয়োজন। এতে তার শুভাখাংকীরা মেয়ের জন্য উপহার হিসেবে দেয় ৪৫ লাখ নগদ টাকা ও এক কেজি পরিমান স্বর্ণালংকার। এ অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নুর মোহাম্মদের ডান হাত লম্বা সেলিমের সাথে নুর মোহাম্মদ গ্রæপের অপর সদস্যদের মধ্যে মদপানরত অবস্থায় গন্ডোগোল বাধে। লম্বা সেলিম বিষয়টি তার বস নুর মোহাম্মদকে মোবাইলে বিচার দেয়। তখন নুর মোহাম্মদ ঘটনাস্থলে না থাকায় লম্বা সেলিম বসকে এগিয়ে আনতে যাওয়ার সময় পথে টর্চল্ইাটের আলো ফেলা নিয়ে যুবলীগ নেতা উমর ফারুকের সাথে বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে লম্ব সেলিমের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা উমর ফারুককে ঘটনাস্থলে গুলিকরে হত্যা করে। নুর মোহাম্মদ এখানে অবস্থান করে থাকলেও সে কৌশলী। রোহিঙ্গা শিবির বা টেকনাফের কোথাও সে ভোটার বা নিবন্ধন হয়নি। ফলে এখানে তার কোন তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায় না। সে কৌশলী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাংলাদেশী হিসেবে ভোটার আইডি সংগ্রহ করেছে বলে একটি সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মিয়ানমারের মংডু এলাকা হতে ১৯৯১ সালের পরে নাফনদী পাড়ি দিয়ে কালা মিয়ার ছেলে নুর মোহাম্মদ জাদিমোড়া এলাকায় অবস্থান নেয়। গড়ে তোলে একাধিক স্বশস্ত্র গ্রæপ।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,
আরসা সামরিক প্রধান হাফেজ আতাউল্লাহ’র ডান হাত হিসেবে পরিচিত নুর আলম অবস্থান করতেন টেকনাফের নয়াপাড়া শরনার্থী ক্যাম্পে। নয়া পাড়াতে দু’স্ত্রী ও লেদা অনিবন্ধিত ক্যাম্পে অপর স্ত্রী অবস্থান করায় নুর আলম দু’ ক্যম্পে সমান আধিপত্য রাখতেন। এ ছাড়া আরসা প্রধান হাফেজ আতাউল্লাহ’র সাথে ভিডিও তে নুর আলমকে ভারী অস্ত্র হাতে ডান পার্শ্বে দেখা যাওয়ায় তাকে সবাই সমিহ করে চলতো। এ ছাড়া র‌্যাব-৭ এর হাতে আটক হয়ে নয়া পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার, পরে জামিনে মুক্ত হওয়ায় তার শক্ত অবস্থান তৈরী হয়েছে আরসা ও রোহিঙ্গাাদের মাঝে। ২০/২৫ জনের এ প্রæপের অপর কয়েকজন উপ-প্রধান হচ্ছেন জাদিমুড়ার নুর মোহাম্মদ, মুছনী নয়াপাড়ার লম্বা সেলিম, মাষ্টার আবুল কালাম আজাদ, খাইয়ুর আমিন।
এ প্রæপটি ২০১৬ সালের ১৩ মে ভোররাতে নয়াপাড়া শালবন আনসার ব্যারকে হামলা চালায়। খুন করে আনসার কমান্ডার আলী হোসেন কে। লুট করে নিয়ে যায়, ২টি এসএমজি, ৫ টি চায়না রাইফেল, ৪ টে শর্টগান ও ৬৭০ টি গুলি। পরে অবশ্য অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার কওে র‌্যাব-৭। এ গ্রæপের অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছে নুরুল আলম, হাসেম, হাসান, জামাল, রুবেল, মাহামুদুল হাসান ও শুক্কুর। এ প্রæপের প্রধান নুর আলম গত জানূযারী মাসের প্রথম দিকে জেল হতে বের হয়। পুনরায় সংগঠিত হয়ে লেদা ও নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিমে আলীখালী পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে অপর্কম চালায়। সম্প্রতি আলোচিত সেই নুরুল আলম বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এখন তার সেকেন্ড ইন কমান্ড লম্বা সলিম দায়িত্ব পাণ করছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে লম্বা সলিমৈর নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী টেকনাফের লেদা ওযার্ড যুবলীগ সভাপতি উমর ফারুককে হত্যা করে। এদের হাতে ভারী অন্ত্রসহ বিদেশী পিস্তল রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া নয়া পাড়া ভিত্তিক জহির গ্রæপ, রহিমুল্লাহ গ্রæপ ও রাজ্জাক গ্রæপসহ আরো বেশ কটি স্বশস্ত্র গ্রæপ সক্রিয় রয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবির গুলোতে স্বশস্ত্র রোহিঙ্গারা সংগঠিত হয়ে রয়েছে। এরা পাহাড়ী এলাকায় গড়ে তুলেছে একাধিক আস্তানা। সেখানে পরিচালিত হচ্ছে স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণও এমন তথ্য রয়েছে ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয় এলাকাবাসী ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে। তবে প্রাণভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। রাতের বেলায় আইনশৃংখলা বাহিনী ক্যাম্পের প্রধান সড়ক গুলোতে তৎপর হলেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অভ্যান্তরিন সড়ক গুলোতে অবস্থান নেন। ফলে বড় ধরনের চিহ্নিত কেউ জালে ধরা পড়ছেনা। যার ফলে ক্যাম্প গুলোতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দারুন আধিপত্য বিরাজ করছে। এসব স্বশস্ত্র গ্রæপকে কোথাও আরসা, কোথাও আল-অ্যাকিন নামে ডাকা হয়। তবে স্থানীয় ক্যাম্পে সাধারণ লোকজন গ্রুপ লিডারের নামেই এদের পরিচয় বহন করায় মনে হবে ছোট ছিনতাইকারী বা ডাকাত দল। আসলে কিন্তু এদের রূপ ভিন্ন। রাতের বেলায় এদের মুভমেন্ট দেখলেই বুঝা যাকে এরা কত সুসংগঠিত ও প্রশিক্ষিত। শিবিরের প্রতিটি বøকে রাত্রিকালিন পাহারাও চালু করেছে এরা। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর প্রথম দিকে আরসা নেতা ও সদস্যরা আত্বগোপনে ছিলো। আবার কেউ কেউ স্থান পরিবর্তন করে ক্যাম্পেও অবস্থান নিয়েছিলো। সম্প্রতি কয়েক মাসের মধ্যে ক্যাম্পের প্রতিটিন বøকে মিয়ানমারের মত গঠন করা হয়েছে কমিটি। ধর্ম প্রচারের নামেও এরা এক মসজিদ থেকে অন্য মসজিদে অবস্থান নিয়ে থাকে। ওখানে বসেই প্রয়োজনীয় শলাপরার্মশ করে থাকে এরা। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সংঘবদ্ধ ছিলো। সেখান থেকে পালিয়ে আসার পর গ্রথম দিকে কৌশলী আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে পরে এরা আস্থে আস্থে শিবিরে আধিপত্য গ্রহন করে। ক্যাম্পের হেড মাঝি, বøক মাঝি ও সাব-মাঝি গুলোর ৯০ ভাগই আরসা সমর্থক বা সদস্য। তবে মিয়ানমারের প্রতি গ্রামের গ্রæপ নেতা গুলো এখানে দায়িত্ব না নিয়ে আড়ালে থেকে কনকাঠি নাছড়ে। তবে ক্যাম্পের বিচার সালিস থেকে পান থেকে চুন খসে পড়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন করছে এরা।
ত্রাণ ও শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো: আবুল কালাম জানিয়েছেন, ক্যাম্পে যাতে আইনশৃংখলা ঠিক থাকে সে জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্প ভিত্তিক মোটিভেশন ওর্যাকও চলছে। যাতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধী তৈরী না হতে পারে।

Comment here