এক্সক্লুসিভজাতীয়টেকনাফসারাদেশ

ভেস্তে যাওয়ার পথে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক !

মুহাম্মদ জুবাইর, টেকনাফ:
একপাশে বঙ্গোপসাগর অপরপাশে পাহাড়। এটিই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের সৌন্দর্য। ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতে এ সড়কটি দেশের অন্যতম নয়নাভিরাম সড়ক। কিন্তু সেই সড়কটি এখন হুমকির মুখে।স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশাল ঢেউ প্রতিনিয়ত আঘাত হানছে মেরিন ড্রাইভে। অব্যাহত ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের পাশে তৈরি মেরিন ড্রাইভ সড়ক কলাতলী থেকে সাবরাং পর্যন্ত চরম হুমকি মুখে রয়েছে।
যে স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ সড়ক করা হয়েছিল, সেই স্বপ্ন ভেস্তে যাওয়ার পথে। বর্তমানে যেভাবে বেপরোয়া গতিতে এনজিওর গাড়ী চলাচল করছে, এভাবে চলাচলে এই সড়কটি সম্পূর্ণ ভেঙে যাবে। তাই এনজিওর গাড়ি চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। এছাড়া গত দুমাস ধরে সড়কের উভয়পাশ তীব্র ভাঙন দেখা যাচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনেও সড়কটি এখন হুমকির মুখে।
বর্ষামৌসুমের উত্তাল সাগরে পানির উচ্ছতা বেড়ে যাওয়ায় সড়ক রক্ষাকবজ জিও ব্যাগ দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে ভাঙন ধরেছে নয়নাভিরাম এই সড়কের। ছোট-বড় অনুমান ১০টি স্পটে এই ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। দ্রুত মেরামত করা না হলে ব্যাপক ভাঙনে মেরিন ড্রাইভ সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমনি ঘুরে দেখা যায়, বৃহম্পতিবার (২আগষ্ট) সকালে টেকনাফের সাবরাংয়ের হাদুরছড়া, মুন্ডার ডেইল এলাকার প্রায় ৬০ মিটার সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, পরিবেশ আইন আইন অমান্য করে মেরিন ড্রাইভের কাছ থেকে অনেকে বালু উত্তোলন করে জমি ভরাট করেছে। এ কারণে সাগরে সামান্য পানি বাড়লেও এরুটে ভাঙন দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা রাহমত উল্লাহ বলেন, এর আগে কখনও এভাবে ভাঙন ধরেনি মেরিন ড্রাইভে। সাগরের ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বড় বড় ঢেউ এসে আঁচড়ে পড়ে মেরিন ড্রাইভে। জিও ব্যাগ টপকে ঢেউগুলো সড়কে উঠেছে। যার কারণে সড়কটিতে ভাঙন ধরেছে।
এবিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, সাগরের জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশি। মেরিন ড্রাইভের কয়েকটি স্পটে ভাঙন ধরেছে। তবে ভাঙন রোধে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করছে। খুব কম সময়ে এই সমস্য সমাধান হবে।
ইউপি সদস্য ছিদ্দিক আহমদ বলেন, সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে মেরিন ড্রাইভের বেশ কয়েকটি স্পটে ব্যাপক ভাঙন ধরেছে। অন্যবারের তুলনায় এবারের ভাঙন ব্যাপক। ইতিমধ্যে ভাঙন রোধে কাজ শুরু কয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সমদ্রপাড় দিয়ে চলে যাওয়া দৃষ্টিনন্দন সড়কটি ১৯৯২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিন দফায় নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ। ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটি ২০১৭ সালের ৬ মে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাগরের উত্তাল ঢেউ যাতে মূল সড়কে আঘাত না করতে পারে, সে জন্য সেনাবাহিনী আগে থেকেই সমদ্রপার্শ্বে জিও ব্যাগ ও পাথরের ব্লক দিয়ে রেখেছে। সাগরের প্রবল সৃষ্ট ঢেউ যেন কোনো বাঁধই মানেনি। এই নয়নাভিরাম সড়কটি দেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বেশ সমাদূত।

Comment here