আন্তর্জাতিকএক্সক্লুসিভচকরিয়াজাতীয়সারাদেশ

মাদক-মানব পাচার ও অপহরণ আতংকেই পার হলো- ২০২৩

মুহাম্মদ জুবাইর, টেকনাফ:
বছর যায়, বছর আসে। আর সময়ের সাথে নানা ধরনের ঘটনার জন্ম দিয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তৈরী হয় নানান আলোচনা ও সমালোচনা। সময় ও ¯্রােত কারও জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি দেখতে দেখতেই কেটে গেল আরো একটি বছর। তবে, বছর জুড়েই নানা ঘটনায় আলোচিত হয়ে উঠে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের নাম। অপহরণ, মাদক ও মানব পাচার, মুক্তিপণ আদায় ও রোহিঙ্গাসহ ইত্যাদি ছিলো অন্যতম। তেমনি নানা আলোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদায় নিল ২০২৩ ও আশায় পদার্পণ করছে নতুন ইংরেজী নববর্ষ ২০২৪ সাল।
গেল ২০২৩ ইংরেজী সালের বছরে সীমান্ত নগরী টেকনাফে ঘটে গেছে স্বরণ রাখার মতো কয়েকটি ঘটনা। এর মধ্য অপহরণ, মুক্তিপণ ও শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের ঘটনা ছিল শিউরে উঠার মতো।
টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে রয়েছে মিয়ানমারের বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের বসবাস। এই রোহিঙ্গা ক্যাম্প কে কেন্দ্র করে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের সাথে মিশে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে আতংক ছিল অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়। সেই অপহরণ চক্র থেকে রেহাই পায়নি স্কুল ছাত্র থেকে শুরু করে বনকর্মীরাও। মুক্তিপণ দিতে না পারলে অনেকে লাশ হয়ে অথবা অঙ্গহানী হয়ে ফিরতে হতো। আবার অনেকের খোঁজও মিলেনি দিনের পর দিন।
এনমনই নির্মম হত্যা কান্ডের শিকার হয়েছিল ৩ বন্ধু। তারা ২৮ এপ্রিল টেকনাফে পাত্রী দেখতে যাওয়ার পথে অপহৃত হওয়ায় ২৫ দিন পর তাদের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল র‌্যাব ও পুলিশ।
২৪ মে বিকেলে টেকনাফের দমদমিয়া গহিন পাহাড় থেকে র‌্যাব এবং পুলিশের দুটি দল ওই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। তারা হলো কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ সওদাগর পাড়া এলাকার মোহাম্মদ ইউছুপ ও সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের রুবেল এবং শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার ইমরান। টেকনাফে পাত্রী দেখতে যাওয়ার পথে অপহৃত হন।
শুধু তাই নয়, অনেকে সাহসীকতার পরিচয়ও দিয়েছে। অপহরণকালে অপহরণকারীকে কুপিয়ে সন্তানকে রক্ষা করার ঘটনাও দেশ ব্যাপী চাউর হয়েছিল। টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় কৃষক বাবার সামনে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় অপহরণকারীকে কুপিয়ে নিজ দুই সন্তানদের রক্ষা করেছিলেন বাবা শাহ আলম। পরে স্থানীয়দের গণ পিঠুনিতে এক রোহিঙ্গা অপহরণকারী নিহত হয়।
১ সেপ্টেম্বর হ্নীলা ইউনিয়নের মোচনী বিটের নেচার পার্ক বনে পাহারা দেওয়ার সময় তিনজন বনকর্মীতে অপহরণ করা হয়। অপরণের শিকার ব্যক্তিরা হলেন হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া এলাকার আবদুল মালেকের ছেলে মো. শাকের (২০), একই এলাকার বকছু মিয়ার ছেলে আবদুর রহমান (৪২) এবং আবদুস শুক্কুরের ছেলে আবদুর রহিম (৪৬)। তাঁরা তিনজনই বেসরকারি সংস্থা নিসর্গের অধীনে বন পাহারাদার ছিলেন। তাদের কাজ থেকে ৬০ লাখ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে দাবী করে। কিন্ত হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর সাহসীকতায় ও পাহারা দলের সদস্যসহ স্থানীয় গ্রামবাসী সাহসি অভিযান চালিয়ে গভীর পাহাড় থেকে ৩ দিন পর উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও সাবেক মেম্বারের পুত্র, স্কুলের শিক্ষার্থীসহ টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া, জাদিমুরা, মোছনী, লেদা গ্রামের একাধিক গ্রামের বাসিন্দাকে অপহণ করে মুক্তিপণ আদায় করে। ফলে সন্ধ্যা নামলেই এলাকা গুলোতে আতংক ছড়িয়ে পড়েছিলো। যা এখনো সেই আতংকের রেশ কাটেনি।
এছাড়াও ঘটেছে একাধিক হত্যাকান্ড। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও আলোচিত হলো দ্বিতীয় শ্রেনীর ফারিয়া খানম জেরিন হত্যাকান্ড। হ্নীলা বড় মাদ্রাসায় এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। শুধু তাই নয়, মাদক ব্যবসায় বাঁধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ সালমান রহমান (২২) নামের এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দূষ্কৃতিকারীরা। জমি-জমার ঘটনা নিয়েও ঘটে একাধিক হত্যাকান্ড।
তাছাড়াও গেল বছরেও মাদকের তকমা হতে ঘোচাতে পারেনি টেকনাফের নাম। মিয়ানমারের সীমান্তুবর্তী হওয়ায় প্রতিদিন মাদক ইয়াবা, আইস, মদ, বিয়ার ঢুকছে এদেশে। কোনভাবেই থামাতে পারছেনা মাদক কারবারীদের। লাখ লাখ পিস ইয়াবা আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় রাঘব বোয়াল মাদক কারবারীরা। এটি নিয়ে টেকনাফে মুখরোচক আলোচনা চলতে থাকে বছর জুড়ে।
তাই নতুন বছরে মাদক, মানব পাচার, অপহরণ ও মুক্তিপণ বানিজ্য থেকে মুক্ত পেতে আইনশৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা আশা করছেন টেকনাফের সচেতনমহল।

Comment here