রোহিঙ্গা সমাচার

মিয়ানমারে সহিংস পরিস্থিতি : রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

 

টেকনাফ ভিশন ডেস্ক : 001056kalerkantho-sompa-1মিয়ানমারে মানবতার চরম লঙ্ঘন চলছে। শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল ক্ষমতায় আসায় বিশ্ববাসী আশা করেছিল, বঞ্চিত রোহিঙ্গারা অধিকার ফিরে পাবে, বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিছুদিন আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে রোহিঙ্গা কমিশন গঠন এই প্রত্যাশা আরো জোরালো করেছিল। সন্ত্রাস দমনের নামে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সেনাবাহিনীর নির্বিচার হামলার সব আশা দুঃস্বপ্নে রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘ উদ্বেগ ব্যক্ত করলেও দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিষয়টি দুঃখজনক, উদ্বেগজনক।

সহিংসতার শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের জন্য নানা সমস্যার কারণ হচ্ছে। সাম্প্রতিক সহিংসতার পরও অনেক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে শরণার্থীদের চাপ আরো বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে নমনীয় হতে বলেছে।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গাদের জাতিগত অধিকার মেনে নেওয়ার মধ্যেই সমস্যার সমাধান নিহিত। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা আমাদের বোঝা হয়ে আছে। তাদের কেউ কেউ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে, মিথ্যা পরিচয়ে নাগরিকত্ব নেওয়ারও চেষ্টা করছে। জাতিসংঘ, ওআইসি, মানবাধিকার সংগঠনগুলোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা সমস্যার মূলে নজর দিতে হবে।

একটি দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অবস্থান করা একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী নাগরিক অধিকার পাবে না—আধুনিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় তা ভাবা যায়? বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করে এসেছে। মিয়ানমার নির্বিকার। সু চির সরকার বিদ্রোহী কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুটির স্থায়ী সমাধান আশা করছে, সেখানে সমস্যা জিইয়ে রাখার নীতি প্রত্যাশিত নয়। এতে জটিলতাই বাড়বে, যার প্রমাণ এই সর্বশেষ পরিস্থিতি। পুলিশের ওপর হামলা বা পুলিশ হত্যার ঘটনা ঘটলে অপরাধীদের খুঁজে বের করার প্রচলিত কৌশল রয়েছে। সেদিকে না গিয়ে সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার গানশিপ দিয়ে বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা নিজ দেশে আজ পরবাসী। অতীতের সামরিক জান্তা তাদের নাগরিক অধিকারই শুধু কেড়ে নেয়নি, সমাজের মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে শিবিরের বন্দিজীবন বেছে নিতে বাধ্য করেছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বলে দারিদ্র্য চরমে। শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের অধিকার থেকে। সর্বশেষ সহিংসতায় অনেক রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে, তাদের আরো অসংখ্য সদস্য প্রাণভয়ে সাগরে ভাসছে।

মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের বাতাস বইতে শুরু করেছে। তবে রোহিঙ্গানীতিতে বড় পরিবর্তনের আভাস নেই। মানবাধিকারের স্বার্থে  সেনাবাহিনীকে নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। দেশটির রাজনৈতিক মহলকেও বুঝতে হবে—অস্বীকার করা নয়, প্রমাণিত সত্যটি মেনে নেওয়ার মধ্যেই সমাধান নিহিত। ন্যায্য নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হলে মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা যেমন পায়ের তলায় মাটি ফিরে পাবে, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে অবস্থানরত এই জাতিগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষের মাতৃভূমিতে ফেরার সুযোগ তৈরি হবে।

Comment here