মোস্ট ওয়ান্টেড রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন”র সহযোগী শীর্ষ গডফাদার জাফরুল ইসলাম বাবুল মেম্বার মাদক ও অস্ত্র’সহ আটক

মোস্ট ওয়ান্টেড রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন”র সহযোগী
শীর্ষ গডফাদার জাফরুল ইসলাম বাবুল মেম্বার
মাদক ও অস্ত্র’সহ আটক

টেকনাফ প্রতিনিধি :

কক্সবাজারের শীর্ষ মাদক গডফাদার জাফরুল ইসলাম বাবুল মেম্বারকে মাদক ও অস্ত্র’সহ আটক করেছে র‍্যাব-১৫। সে উখিয়া উপজেলার আব্দুর রশিদ”র ছেলে এবং পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। ৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরবেলায় টেকনাফের কাটাখালী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় ৫৫ হাজার পিস ইয়াবা, ১টি বিদেশী পিস্তল, ১টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার অফিসের
সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া)
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী।
তিনি জানান, গত বুধবার রাতে র‍্যাব-১৫ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টেকনাফের কাটাখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে চোরাকারবারির মূলহোতা কক্সবাজারের শীর্ষ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফরুল ইসলাম প্রকাশ বাবুল মেম্বার (৪২)কে ইয়াবা ও অস্ত্র গ্রেফতার করে।
জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত বাবুল কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া এলাকার একজন অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী। স্থানীয় এলাকা টেকনাফে সে পাশ্ববর্তী দেশ হতে মাদক চোরাচালানের গডফাদার হিসেবে চিনতো। গ্রেফতারকৃত বাবুল মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এলাকায় ২০-২৫ জনের একটি চক্র গড়ে তোলে। গ্রেফতারকৃত বাবুল মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এলাকায় চাঁদাবাজি, স্বর্ণ চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্র, জোরপূর্বকভাবে অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধভাবে চোরাই পথে গবাদি পশু চোরাচালান, অবৈধভাবে পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসাসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

ধৃত বাবুল মেম্বারের বরাত দিয়ে র‍্যাব-১৫ সূত্র জানায়, সে ২০০৫ সালের পরবর্তীতে টেকনাফ এলাকায় মাদক ও অন্যান্য চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পরে এবং পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অবৈধ পথে মাদক এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত। ২০১৭ সালে এলাকার অপর এক মাদক ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পলাতক তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সাথে তার পরিচয় হয়। নবীর সাথে পরিচয়ের পর থেকে গ্রেফতারকৃত জাফর বিশদ আকারে মাদক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃত জাফর পলাতক নবী হোসেনের সাথে চুক্তি করে চিংড়ি ব্যবসার আড়ালে রাতে আধারে পার্শ্ববর্তী দেশে হতে নাফ নদী দিয়ে মাদক, অস্ত্র ও স্বর্ণ চোরাচালান নির্বিঘ্নে করে আসছে । সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে মাদক সহ অন্যান্য চোরাকারবারির সময় তার দলের ২০-২৫ জন সশস্ত্র সদস্য পাহাড়া দিয়ে চালান বাংলাদেশে পৌঁছাতো। গ্রেফতারকৃত বাবুল পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার
হতে সপ্তাহে ৪/৫টি ইয়াবার চালান এনে অস্ত্রধারী কেরিম্যানদের সহযোগিতায় বালুখালী ক্যাম্প সংলগ্ন তার নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু চিংড়ির খামারের ভিতরে রাখতো বলে জানা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আনা প্রতি চালানে প্রায় ২ লক্ষ পিস ইয়াবা থাকতো এবং তা দেড় লক্ষ টাকায় কিনে এনে প্রায় ৩/৪ লক্ষ টাকায় বিক্রয় করতো। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত বাবুল মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে স্বর্ণ এনে তা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণ করতো।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত জাফরুল ইসলাম ২০০১ সালে চট্টগ্রাম একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে ভর্তি হয়ে ১ বছর পড়াশোনা করার পর তা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে স্থানীয় কলেজ হতে বিএ পাশ করে। সে ২০০৫ সালে পালংখালি এলাকায় জাবু নামের এক ব্যক্তির খুনের দায়ে ঐ মামলার আসামি হয় এবং চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে থাকে। তার বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে টেকনাফ থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের হয়। সে ২০১৭ সালে জাবু হত্যা মামলায় প্রায় ২ মাস কারাভোগ করে সে জামিনে বের হয়ে আসে। সে অবৈধ অস্ত্র মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অবৈধভাবে কক্সবাজারে বিলাশ বহুল ফ্ল্যাট, ডামট্রাক, ট্রাক, এলাকাতে জমি এবং মাছের প্রজেক্টসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিপুল পরিমান সম্পদ গড়ে তোলে। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় হত্যা, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ৯ টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী।