আন্তর্জাতিকরোহিঙ্গা সমাচার

২৫ আগস্ট কালো দিবস : ১৫ পয়েন্টে কর্মসূচী ঘোষনা : রোহিঙ্গারা পূর্ন নাগরিক অধিকার নিয়ে ফিরতে চায় :

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ ভিশন ডটকম:
২৫ আগষ্ট কে “কালো দিবস” ঘোষনা করেছে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংঘঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি (এআরএস)। এ দিবসটি পালনের জন্য তারা কর্মসূচীও ঘোষনা করেছে। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সকাল ৯ টায় কর্মসূচী শুরু হবে। এরপর মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের উপর বর্বরতা ও গণহত্যা সম্পর্কে আলোচনা, আইনী অধিকার সম্পর্কিত বত্তব্যসহ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ দুপুর সাড়ে ১২ টার সময় রোহিঙ্গা সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে দিবসটির সম্পাতি হবে।
এআরএস মুখপাত্র মো: মুহিব উল্লাহ জানিয়েছেন উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টাইংখালী, ক্যাম্প ১৭, ৫, ৭, ২ ও ১ , জামতলী, টেকনাফের লেদা, শালবাগান ও নো-ম্যান্স ল্যান্ড রোহিঙ্গা শিবিরে একই সময়ে ২৫ আগস্ট কালো দিবসের কর্মসুচী পালিত হবে।
অপর দিকে “দা ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন” নামের একটি সংগঠন ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা জেনোসাইড স্বরণ দিবস পালনের ঘোষনা দিয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরে সংগঠনটি বাংলা, ইংরেজী ও বার্মিজ ভাষায় লিফলেট বিতরণও করেছে।

গত ২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট রাখাইন (আরাকান) রাজ্যের ৩০ সরকারী সামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগে মিয়ানমার সরকারী বাহিনী রোহিঙ্গা জাতিঘোষ্ঠীর উপর বর্বর হামলা চালায়। মিযানমার সরকার এ ঘটনার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) বা আল-ইয়াকিন নামক রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনকে দায়ী করে।
এরপর পরই মিয়ানমার সেনা বাহিনী, পুলিশ ও উগ্র বৌদ্ধরা মুসলিম বসতির উপর আক্রমন শুরু করে। নারী ধর্ষণ, ঘরবাড়ীতে আগুন, লুটরাজ, মসজিদ মাদ্রাসা আগুন ধরিয়ে দেয়। হত্যা করে শিশু থেকে বৃদ্ধকে। ধর্মীয় নেতাদেও পুড়িয়ে মারে । শত শত যুবককে আটক করে গণকবর দেওয়ারও অভিযোগ করে রোহিঙ্গারা। গণহত্যার মত অপরাধ , নারী ও শিশু ধর্ষণ ইত্যাদি হতে বাচঁতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আ¤্রয় নেয়। টেকনাফ- উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে পাহাড়ী পথ, নাফনদী ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। গত এক বছরের ৭ লাখেরও বেশী রোহিঙ্গা ২৫ আগষ্টের পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর আগে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর অপর একটি হামলার ঘটনার জের ধরে মিয়ানমার সেনা বাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এর আগে ১৯৯১ সালে আরেক দফায় আড়াই লাখেরও বেশী সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে বাংলাদেশে চলে আসলেও পরের বছর থেকে এদের মিয়ানমার ফেরত নেওয়া শুরু করায় প্রায় ২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা স্বদেশে ফেরত যায়। তখন থেকে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়া পাড়াতে প্রায় ২৪ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা রয়ে যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সর্বশেষ সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের যে রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো সেখানে নতুন পুরাতন মিলে প্রায় সোয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা তালিকাভূক্ত হয়। রোহিঙ্গাদেও প্রত্যাবাসন নিয়ে গেলো বছর নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ও গেলো জুন মাসের দিকে মিয়ানমার ইউএন চুক্তিবদ্ধ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সম্প্রতি বাংরাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে একটি টিম আরাকান সফর করে আসেন। এ টিমের সদস্য বাংরাদেশ সরকারের ত্রাণ ও শরনার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, একটি ট্রানজিট জেটি ও ২ টি ট্রানজিট হাউস ছাড়া এখনো কিছুই তৈরী করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে তাদের নিজস্ব বাড়ী ঘরে ফিরে যেতে পারে সেই পরিবেশ সেখানে এখনো গড়ে উঠে নি। অপর দিকে মিয়ারমারের ষ্টেট কাউন্সিলার অং সান সুচি সিঙ্গাপুরে একটি আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে বলেছেন মিয়ানমার রোহিঙ্গাদেও ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু বাংলাদেশের উদ্যোগের অভাবের কারনে তা হচ্ছে না।
এদিকে ঘটনার ১ বৎসর পূর্তী উপলক্ষে সম্ভাব্য হামলার আশংকায় মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। তারা ১৬০ টি স্পটে টহল বৃদ্ধি করেছে। জানা যায়, গত বছর ২৫ শে আগস্ট মংডু, বুথিডাং ও রাথেডাংয়ে ৩০টি পুলিশ আউটপোস্টে হামলা চালায় আরসা। আর এর জের ধরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর চালায় নৃশংস নির্যাতন। ওই হামলার প্রথম বার্ষিকী ২৫ শে আগস্ট । আরসার ওই হামলায় এক ডজনেরও বেশি নিরাপত্তারক্ষী ও সরকারি কর্মচারী নিহত হন। এমনটা দাবি করে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া। তাদের হিসেবে পরের মাসেই বেসামরিক মিলে নিহতের সংখ্যা ৮০র বেশি বলে স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ। আরসাকে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের নিন্দা জানায় সরকার। রাখাইন রাজ্য পুলিশের কর্নেল অং মায়াত মোই    বলেছেন, শরণার্থীদের রূপ ধরে আরসা সীমান্ত বরাবর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। সে জন্য সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ১৬০ টিরও বেশি পুলিশ আউটপোস্টে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় এক হাজার পুলিশ সদস্য।
গত বছর আরসার হামলার জবাবে সেনাবাহিনী যে অভিযান চালায় তাতে আরাকানিজ, থেট এবং ডাইংনেট সহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষ পালাতে বাধ্য হয়। জাতিসংঘের হিসাব মতে, প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। তবে রোহিঙ্গাদের এত বিপুল সংখ্যাকে অস্বীকার করে মিয়ানমার সরকার। এরপর ওই এলাকায় স্থিতিশীলতা পুনর্বহাল করা হয়েছে। কিন্তু মংডুর সব সম্প্রদায়ই এখনও এক আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও তারা আক্রমণের শিকার হতে পারেন, যেমনটা হয়েছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরের হামলার পরে।

Comment here