ক্রাইমজাতীয়টেকনাফসারাদেশ

কুরিয়ার সার্ভিসে আসছে পর্সেল যাচ্ছে মাদক চোরাচালান !

মুহাম্মদ জুবাইর, টেকনাফ::
দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী কঠোর অভিযানের মধ্যেও থেমে নেই মাদক চোরা কারবারিরা। তারা বিভিন্ন কলা- কৌশলে মাদকের চালান কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচারের অভিযোগ উঠেছে অহরহ। র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কড়াকড়িতেও থামছে না ভয়ঙ্কর এই অপরাধীরা। মাদকদ্রব্য সহ চোরাইপণ্য পাচারের অন্যতম সহজ মাধ্যম হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস। কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালনায় বিধিমালা থাকা সত্বেও তা যথাযথ কার্যকর নেই। ফলে বিভিন্ন কলাকৌশলে অবাধে মাদক ও চোরাইপণ্য পাচারে ব্যবহার হচ্ছে কতিপয় কুরিয়ার সার্ভিস। পার্সেল প্রেরণের নামে এক সীমান্ত হতে সীমান্তের অপর প্রান্তে পাচার হয়ে যাচ্ছে মাদক সহ চোরাইপণ্য। এরই প্রেক্ষিতে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে গত শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) মরিচ্যা চেকপোষ্টে পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসের পরিবহন তল্লাশী করে ১০হাজার ইয়াবাসহ ৩ জড়িতকে আটক করেছে। রামু ব্যাটালিয়ন (৩০বিজিবি) এর অধীনস্থ মরিচ্যা চেকপোষ্টে তল্লাশিকালীন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে টেকনাফ হতে চট্টগ্রামগামী পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসের ০১টি কাভার্ড ভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে ১০ হাজার ইয়াবাসহ আটক ৩জন হচ্ছে, ভ্যান চালক কুমিল্লা নাঙ্গল কোর্টের কুকআলী গ্রামের বাসিন্দা আলা উদ্দিন এর পুত্র মাসুদ রানা (৩৪), গাইবান্ধা জেলার পটল পবণ তাহির এলাকার জাহিদুল ইসলাম এর পুত্র মোঃ জামিল আহম্মেদ (২০) ও চকরিয়া কৈয়ারবিল এলাকার মমিনুল হক এর পুত্র রাহাত সরোয়ার (১৯)। এসময় ৩ টি মোবাইল সেট উদ্ধার ও ব্যবহৃত কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হয়। রামু ৩০বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্নেল সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান তানজিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাভার্ড ভ্যানের থাকা পার্সেলের মধ্যেবিশেষভাবে লুকায়িত অবস্থায় বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ইয়াবাগুলো ছিল।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদক-চোরাইপন্য এনে ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখায় মাদক কারবারিরা নিজেরা মাদক পরিবহন না করে বিভিন্ন কায়দায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকে। একটি সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেট কতিপয় কুরিয়ার সার্ভিসে পার্সেল পাঠানোর নামে নামে-বেনামে ঢাকায় ইয়াবার চালান পাচার করছে। এ ক্ষেত্রে তারা কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিস এর ডেলিভারী ম্যান ও পার্সেল নিয়ে আসার গাড়ীকে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে যে ব্যক্তি ইয়াবার চালান পাঠিয়ে থাকে, তার নাম ও ঠিকানা ভুয়া ব্যবহার হচ্ছে। ফলে মূল হোতারা অধরাই থাকছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, কুরিয়ার সার্ভিসে মাদক চোরাচালানকারি সিন্ডিকেটের কৌশল ভিন্ন ভিন্ন রকমের। এদের মূলহোতারা সব সময় আড়ালে থাকে। বিশেষ করে মাফিয়ারা কয়েক হাত বদল করে চালান পাচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালিত হয়ে থাকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বেশ কিছু বিধিমালার ওপর নির্ভর করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কুরিয়ার সার্ভিসের লাইসেন্স প্রদান করে থাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। যেকোনো পণ্য পরিবহনে এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে শর্তারোপ করা হয়েছে। তেমনি কোন কোন পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ তা-ও কঠোরভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বিধিমালায়। কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালনায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রাশিত গেজেটে কোন কোন নিষিদ্ধ পণ্য বা দ্রব্য পরিবহন করা যাবে না তা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালনায় কঠোর আইন ও বিধিমালা থাকলেও এর প্রয়োগ নেই বাস্তবে। ফলে দিনদিন কুরিয়ার ব্যবসার আড়ালে বেপরোয় ভাবে মাদক ও চোরাচালান অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

Comment here